রাগ দমনে ইসলামে কি বলা আছে?


ইদানিং দেখছি কিছু বাদর মুক্তার মালা গলায় পরতে, নতুন নতুন বাদরামি করছে, যদিওবা অনেক বাদর আগেই মুক্তার মালা পরেছে,নতুন করে আরো বাদর যোগ হতে চাচ্ছে, তাদের এই বাদরামিতে অতিষ্ট হয়ে শরীরে রাগ উঠে যাচ্ছে,তাই নিজের রাগ যেনো নিয়ন্ত্রনে থাকে এবং আপনাদের মধ্যে যারা আমার মত রাগান্বিত হচ্ছেন তারা যাতে নিজেদের রাগ সংবরন করতে পারেন, সেই জন্য রাসুলের কয়েকটি হাদিসের উল্লেখ করা, আমিও বারবার পড়বো, আপনারাও পড়েন, নিজের রাগকে সংবরন করেন, কারন এখন যুগটাই বাদরদের, চার দিকে চলিতেছে সার্কাস।

রাগ দমন করতে হাদিসের নির্দেশনাঃ –

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-কে বলল, ‘আমাকে উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘রাগ কোরো না।’ সে ব্যক্তি কয়েকবার এ কথা বলল, রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘রাগ কোরো না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১১৬)

ইসলাম রাগকে একটি মানবীয় ত্রুটি হিসেবে উল্লেখ করে তাকে দমন করতে বলেছে। রাগ দমনের কিছু পদ্ধতিও ইসলামী শরিয়তে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনায় দুই ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর কাছে বসে পরস্পর গালাগাল করছিল। তাদের একজনের চোখ লাল হয়ে উঠল ও গলার শিরা ফুলে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমি একটি বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে তবে তার এ অবস্থা কেটে যাবে। সে বাক্যটি হলো, আমি আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮১২)

শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো রাগ হয় তখন সে যদি দাঁড়ানো থাকে, তবে যেন বসে পড়ে। যদি তাতে রাগ চলে যায় ভালো। আর যদি না যায়, তবে শুয়ে পড়বে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৪)

ওজু করা নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। নিশ্চয় পানির দ্বারা আগুন নির্বাপিত হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয় সে যেন অজু করে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৬)

চুপ থাকা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। কঠিন কোরো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৪৭৮৬)

কোরআন ও হাদিসে রাগ দমনের একাধিক উপকারিতা বর্ণনায় এসেছে। রাগ দমনকারীর জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি রাগ করবে না, তাহলে তোমার জন্য জান্নাত।’ (সুনানে তিবরানি, হাদিস : ২১)

অন্য হাদিসে রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে ব্যক্তি কুস্তি লড়ে অপরকে ধরাশায়ী করে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিই শক্তিশালী, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৮০৯)

আল্লাহ তাআলা রাগ দমনকারীকে ভালোবাসেন। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং রাগ দমনকারীগণ ও মানুষকে ক্ষমাকারীগণ। আল্লাহ অনুগ্রহকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)

সব রাগ নিন্দনীয় নয় রাগ নিন্দনীয়, তবে সব রাগ দোষের নয়। কিছু রাগ এমন রয়েছে, যা প্রশংসনীয়। মূলত রাগ দুই প্রকার। নিন্দনীয় রাগ : নিন্দনীয় রাগ হচ্ছে সেসব জাগতিক রাগ, যার ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সা.) উম্মতকে সতর্ক করেছেন। যেমনটি আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। প্রশংসনীয় রাগ : সেসব রাগ প্রশংসনীয়, যা আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও দ্বিনের স্বার্থে করা হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো নিজের কোনো ব্যাপারে কারোর কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে মহান আল্লাহর নিষিদ্ধ কোনো কাজ করে ফেললে তার জন্য যথাবিহিত শাস্তির ব্যবস্থা করতেন।’ (আল জামে বাইনাস সাহিহাইন, হাদিস : ৩১৮৪)

রাগ দমনের দৃষ্টান্ত আলী ইবনে হুসাইন (রহ.)-এর দাসী অজুর পানি ঢেলে দিচ্ছিল। হঠাৎ পানির পাত্রটি তার হাত থেকে তাঁর (আলী ইবনে হুসাইন রহ.) চেহারার ওপর পড়ে গেল এবং তা ভেঙে গেল। তিনি আহত হলেন। অতঃপর তিনি তার দিকে মাথা ওঠালেন। তখন দাসী বলল, নিশ্চয় আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা রাগ দমন করে।’ তিনি দাসীকে বললেন, ‘আমি আমার রাগ দমন করলাম।’ সে বলল, ‘যারা মানুষকে ক্ষমা করে।’ তিনি তাকে বললেন, ‘আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।’ সে বলল, ‘আল্লাহ অনুগ্রহকারীকে ভালোবাসেন।’ তিনি বললেন, ‘যাও আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য মুক্ত করে দিলাম।’

মতামত দিনঃ