দিনলিপি

তামান্না আহমেদ কেয়া


শুরুর কাহিনী তোমার মনে পড়ে?

ওই যে সেদিন! এই ধরো চার বছর আগের তুমি’টা। প্রথম প্রথম আমি তোমার সাথে কথা বলতেও পারতাম না ভয়ে কি অদ্ভুত অনুভূতি আমিটা জুড়ে ভিড় করতো।

ধীরে ধীরে ভয় সেরে উঠলো, আমি তোমার চোখের দিক তাকিয়ে কথা বলতে না পারার অভ্যাস ও আস্তে আস্তে সেরে উঠলো। তারপর থেকে তোমাকে আমি ভীষণ করে ভালবাসতে শুরু করলাম।

তুমি অন্য কারো সাথে কথা বললে খুব হিংসে হত আমার কিন্তু তোমাকে কখনোই বুঝতে দিতাম নাহ। আর তুমি, দিন দিন আমার সামনে আরো বেশি করে অন্যের সাথে হাঁসি তামাশা মজায় সময় কাটাতে। একদিন তোহ ভেবেছিলাম মরেই যাব। বিশ্বাস করো প্রিয় ভালবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে শেয়ার করার কষ্ট খুব ভয়াবহ, নিজেকে কুরে কুরে খায়, একদম শেষ করে দেয়।
দিন কোনোরকমে কাটালেও রাতে খুব করে কান্না পেতো। প্রতিদিন এভাবে কাঁদতে আর ভাল লাগলো নাহ।

একদিন সৎ সাহস নিয়ে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম “জারির, তোমার এমন আচারনে ভীষণ কষ্ট হয় আমার। মনে হয় আর একটুও বেঁচে না থাকি!

জারিরের অঙ্গভঙ্গিতে মনে হচ্ছিলো ও এতদিন হয়তো আমার এই কথাটা শুনবার জন্যই অপেক্ষায় ছিলো আর ও আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ওই আচরণ করতো।

জারির আমাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।

আমার মাথাটা ওর বুকে ঠেকে যেতো, আর আমি ওর হার্টবিটের ধ্বনি শুনতাম খুব করে। জারির ভালবাসার সুরে বলতে লাগলো ” তোমাকে বড্ড ভালবাসি নীল। আমি আর কখনোই তোমাকে কষ্ট দেওয়ার মতন কিছুই করবো না।
জারিরঃ হাতটা দাও,
নীলঃ এই নাও!
জারিরঃ এই হাতে হাত রেখে প্রমিস করলাম আর কখনোই কষ্ট দিবো নাহ আমার তুমিটা কে। নীল পাগলি’টা কে কখনো আমার থেকে আলাদা হতে দিবো নাহ। প্রমিস, প্রমিস এবং প্রমিস।

হাতে হাত রেখে তো কথা দেওয়ার ক্ষমতা সবাই রাখে। ছেড়ে যাবে না কখনো এমন প্রতিশ্রুতি ও দেই। কিন্তু দিনশেষে কোনো হাত ই কথা রাখে নাহ।

~উনিশ এক একুশ
~তামান্না আহমেদ কেয়া


দিনশেষে কেউ কারো না। যতই আপন হোক দিনশেষে তাদের ও হারিয়ে ফেলতে হয় কোনো এক সময়।

জীবনের এমন একটা পর্যায়ে এসে গেছি যেখানে নতুন কেউ আসুক বা পুরাতন কিছু নিয়ে একদম মাথাব্যথা নেই। থাকলে থাক না থাকলে যা।

দিনের ব্যস্ততার ভীড়ে অহেতুক অশান্তির যন্ত্রণা কোনোরকম ভুলে থাকা চললেও রাতে ঠিকই হেরে যেতে হয়।

মিথ্যে আশ্বাসে বেঁচে থাকে কত শত সম্পর্ক তবুও সেই মিথ্যা বুকে চেপে শক্ত করার চেষ্টায় নড়বড়ে শরীর টা, কিন্তু বারবার ব্যর্থ। তবুও মিথ্যা আশ্বাসে ভাল থাকা খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে ফেলি নিজেকে।

দিনশেষে ঘরে ফিরতেই অন্ধকার লেপ্টে নেই পুরো আমিটা জুড়ে। চোখ দুটি ভীষণ ভারী হয়ে ওঠে। চোখের কোনা দিয়ে এলিয়ে পরে দু ফোটা লবনাক্ত জল। আর মনে পড়ে সেই আপন মানুষ গুলোর স্বার্থপরতা।

তবুও ব্যর্থতার তালিকায় নিজেকে আবদ্ধ তো করা যাবেই না এমন চিন্তাই, বালিশ ভেজানো রাতগুলো সাক্ষী রেখে নতুন করে জোড়া লাগাবার চেষ্টা।
তবুও ব্যর্থ।

আমি তো স্বার্থপর না তাই দায়িত্ব থেকে পালাতেও পারি না।

~প্রহর
~সাত দুই একুশ
~তামান্না আহমেদ কেয়া


মাঝরাতে কেঁদেছি।

হ্যাঁ আমি আপনার জন্য মধ্যরাতেও কেঁদেছি ভিজে ছিলো বালিশ। আপনাকে ছেড়ে চলে আসবো ভেবেছি আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছি। আমার দু’ফোটা অশ্রুজল সাক্ষী আপনার প্রতি আমার ভালবাসার।

আপনাকে ছেড়ে এসেছি ঠিকই কিন্তু ফেলে এসেছি এক আকাশ স্মৃতি, যা চাইলেও আপনি কখনোই আমাকে ভুলে থাকতে পারবেন না। আপনি কি তবুও ভুলে যাবেন আমাকে?

ভীষণ রকম কেঁদে কান্না মাখা অশ্রু নিয়েই কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম টের পাই নি অথচ খুব ভোরেই ঘুম ভেঙে আবার মনে করিয়ে দিয়েছিলো আমার আপনাকে ছেড়ে যেতে হবে।

চোখ খুলতেই আবার কেঁদে ফেলেছিলাম। কিছুক্ষণ পরেই আমার দরজার কড়া নেরেছিলেন আপনি। হ্যাঁ আপনি, আপনার সাথে ছিলো এক বুক ভালবাসা আমার জন্য। আমি দরজার সামনে যেতে না যেতেই আপনি আলিঙ্গন করে নিয়েছিলেন আমাকে পুরো আপনিটা জুড়ে।

আপনি বারবার মায়াবী ভঙ্গিতে তাকাচ্ছিলেন আমি বুঝেছিলাম সে চোখের ভাষা।

আর কটা দিন থেকে গেলেই পারতে এমন কিছুই বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি আপনার ভাষা বুঝলেও থেকো যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নেই নি।

আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে। আপনাকে ছেড়ে যাবার বেলায় আপনার ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্নার দৃশ্য আমার হৃদয় কেড়েছে। আমি সহস্রাধিক বার চাইলেও আপনালে ভুলতে পারছি না।

বাস ছেড়ে দিবে দিবে এমন সময় মনে হচ্ছিলো বাস খুবই স্বার্থপর!

প্রিয়জনদের থেকে দূরে নিয়ে যায়, অনেক দূরে!

কেয়া


একটা সময় আসে যখন সহস্র চাওয়াতে শীড়দাড় শক্ত রাখা যায় না। অজস্র ভুলভ্রান্তি তো থাকবেই, তাই বলে তুমি বারংবার দূরে সরিয়ে দিবে?। কত কীর্তি? তুমি বোধহয় অন্য কারো অধ্যায়! আর এদিকে আমি জুড়ে নিয়েছি বোকামি, পাগলামির ঘর। অস্থির হয়ে পরেছি তবুও নামের প্রতিটি বর্ণ ভেসেছে এক সেকেন্ড ও ভুলে থাকতে পারি নি।

ট্যাক্সির পিছনে বসে আচমকাই তোমার কথা স্মরণে ভুল পথে চলে গিয়েছি কত-শত। কেরামতি দেখিয়েছো বরং একবার ও বোঝার চেষ্টা করো নি আমাকে।

সেদিন অজান্তেই তোমার মুঠোফোন বারংবার বন্ধ পেয়ে দারুণ দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম। ঘন্টা তিনেক পরে ঠিকই তোমার খোঁজ অথচ জিজ্ঞাসা করায় কি চিল্লাপাল্লা আর পাল্টা জবাব যা যে কেউ নিতে পারবে না।

এমন অসুখ নিয়ে বেঁচে আছি তবে ভালো নেই। মাঝেসাঝে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে ভালো নেই।

তুমি আমার ভুল বানানে মিশ্রিত লাল রঙের আবির্ভাব যে অসুখ প্রতিক্ষণ ছাই করে দেয় আমাকে!

-হেঁয়ালি
-কেয়া


হঠাৎ করে আকাশ ভীষণ ভারী হয়েছে। চাল বেয়ে টুপটাপ জ্বল গড়িয়ে পড়ছে উঠানে। আমি তাঁকিয়ে তাঁকিয়ে দেখছি। মাঝেসাঝে কি দারুণ শব্দ করে মেঘেরা ডাকছে৷ খুব ভয় হচ্ছে! সূর্য্য এবার না হয় অবহেলা ঝেড়ে একটু আলিঙ্গন করতে ক্ষতি কি?
সূর্য্য আমাকে কখনো জাপটে ধরেনি বরং সম্পর্কটা না রাখার নানান কান্ড জুটিয়েছে বেশ। জমিয়ে রাখা প্রখর বেদনা প্রতি মূহুর্তে ছাই করে দেয়।

অতঃপর বিকালে রেলস্টেশনে যাওয়ার প্লান। সেখানে কত প্রেমিক-প্রেমিকাদের ভালবাসার প্রস্থান ঘটেছে। চোখের সামনে থাকাতে কেউ গ্রাহ্য করবে না, দূরে সরে যাও ঠিকই বুঝবে। তাই বলে কি অতটা দূরে যেখান থেকে আর কখনো ফিরে আসা যায় না!

জানো সূর্য্য ওরা না দু’জন ই খুব করে চাইতো সম্পর্ক টা শেষ অব্দি নিতে। কিন্তু পরিবার ওদের ভালোবাসা বারংবার অবহেলায় মিশিয়ে নানান কথা শুনিয়েছে, তাই বলেই তো দু’জনে একসাথে ভালবাসা উৎসর্গ করেছে। তুমিও কি পারতে না, বলো পারতে না একটু আগলে রাখতে?

হ্যাঁ তুমিও আগলে রাখতে জানো, তুমিও ভালবাসতে জানো। তুমি ও নামায শেষের মোনাজাতে খুব করে চেয়েছো তোমার প্রেয়সীকে। কিন্তু আমিই তোমার প্রেয়সী হতে পারলাম না সূর্য্য। ভালোবাসার অভাব কখনো বুঝতে দেয় নি তোমাকে আর তুমিও তাকে বুঝতে দাও না!

সূর্য্য মনে আছে… আমার হাতে হাত রেখে কথা দিয়েছিলে কখনো আলাদা হতে দিবে না, বাদাম চিকুতে চিকুতে কত প্রেমিক প্রেমিকাদের গল্প শুনাতে, মন খারাপে জাপটে ধরে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলতে “ভালোবাসি”; একটা দিন না দেখেও থাকতে পারতে না, যখন যেখানে ইচ্ছে ঘুরতে নিয়ে যেতে।

বেঁচে থাকার ছিটেফোঁটা ইচ্ছে ও হারিয়েছি সূর্য্য সেদিন তোমাদের হাতে হাত রেখে ভালবাসার দৃশ্য দেখে। তুমিও ঠিক একইভাবে তার চোখে চোখ রেখে ভালোবাসি বলো। তার মন খারাপে তুমিও নিজেকে ভালো রাখাটা হারিয়ে ফেলো।

সূর্য্য আমি তো আজ তোমার প্রাক্তনের খাতায় আবদ্ধ হয়েছি। তবে কি জানো, প্রাক্তনেরা ও সারাজীবন তোমার অজান্তে মুখ লুকিয়ে, চিরকুট লিখে আকাশে উড়িয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, কল্পবিলাসীতে তোমার ছুয়ে, এক রাশ দুঃখ নিয়ে বাকি জীবনটা ভালবেসে যেতে পারে।
হৃদয়ের এক কনে যাবজ্জীবন লেখা থাকে তোমার নাম; তুমি কখনোই তার প্রাক্তন হবে না!

প্রাক্তন
-কেয়া


এইতো আছি আমি বেশ, প্লে লিস্টে পছন্দের গান আর চায়ের কাপে ঠোঁট লাগিয়ে আরামের চেয়ারে দুলছি। এর মধ্যে হঠাৎ এক অচেনা নাম্বার থেকে কল অচেনা ভয়েস।

-হ্যালো কে বলছেন? কাকে চাই? মুঠোফোনের ওপাশ থেকে আগেপাছে কোনো কথা বাদেই প্রশ্ন আসলো।
-রুদ্রের কে হন আপনি?
-জ্বি? আপনি কে বলছেন সেটা আগে বলুন। হুটহাট আমি আপনাকে কেনো বলতে যাবো?
-রুদ্র কে ক’দিন যাবৎ চিনেন?
-এইতো বছর পাঁচেক। কেনো?
-তাহলে এবার বলুন রুদ্রের কে হন আপনি?
-প্রেমিকা।

-ব্যাস! এতটুকুই জানার ছিলো। ধন্যবাদ!

আচমকা ফোনে রুদ্র রুদ্র বলে নানান প্রশ্ন তারপর থেকে ওর ভেতর কেমন একটা অনিয়ম দেখতে পাচ্ছি। ঘুম থেকে উঠে আমাকে আর কল ও দেয়না সারাদিনে মিনিট দশেক ও বরাদ্দ জুটছে না কপালে।

রুদ্র হঠাৎ এত পরিবর্তন। ওর এভাবে হুট করে পরিবর্তন আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। নানান অহেতুক প্রশ্ন ঘাটি করে রেখেছে আমার ভেতর।

দিন যাচ্ছে রুদ্রের খামখেয়ালিপানা বেড়েই চলেছে।

অতঃপর একদিন সে বললো ভুলে যাও আমাকে!

তবে কি ওরা প্রেমিক-প্রেমিকা!

-কেয়া


ওরা কখনোই খারাপ থাকে না। দু’চারটে অতীত মনে এসে চোখ ভার হয়ে আসে না। দিনশেষে খুব করে আগলে রাখতে শিখেছে নতুন মানুষকে। দিন রাত বেশ হাঁসি, ঠাট্টা, তামাসায় চলে যাই। ওদের কোথাও কোনো অতীত নেই। ছিলোই বা কখন?

নিজের বেশ পরিবর্তন এনেছে অথচ আমার বেলায় এত অনিয়ম কেনো? একটু নাহয় নিয়মে আসতে তা হলেও তো থেকে যাওয়ার কান্ড জুটাতাম বেশ।

অতঃপর তুমিও রোজ অনিয়ম ভঙ্গ করে নিয়মে আসো, তবে আমার জন্য না।

তোমার একটু নিয়ম; আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিতো না। চোখের বিশ্রাম দুয়েক প্রহরের না হয়ে বরং ঘন্টার পর ঘন্টা রয়ে যেতো। তুমিও না, আমার অতীত হতে না। স্মৃতি আলিঙ্গন করে বেঁচে থাকার যন্ত্রণায় রোজ রোজ পুড়তেও হতো না। যখন তখন ইচ্ছে অনিচ্ছেয় অশ্রুসিক্ত চোখ বেহায়াপনা ও করতো না।

তবে কি জানো, আমিও ভালো থাকতাম! অনিয়ম ছেড়ে একটু নাহয় নিয়মে আসতে ক্ষতি’ই বা হতো কি? আমি কি কম ভালোবেসেছিলাম।

-কেয়া


আমাদের বিচ্ছেদ হয়নি অথচ মনের বিচ্ছেদ হয়েছে। যেখানে রোজ রোজ তোমার একটু ভালবাসার লোভে সব ছেড়েছি, সেখানে তুমিই আমায় ছাড়বার কান্ড জুটাও রোজ। নিজের সহস্র শখ, আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছি একটু ভালবাসা পাবো বলে, কিন্তু দিনশেষে সেটুক ও জুটেনি আমার কপালে।

অতঃপর দিনশেষে আমরা দু’জন ই ভালো আছি নিজেদের মত করে। পাশাপাশি কাছাকাছি থেকেও কারুর মনের খোঁজ কেউ রাখিনি।

ছেড়েও যাও না আবার জাপটে ধরোও না।

বছরের পর বছর একসাথে থেকেও আমি’ই রইলাম, আমরা আর হতে পারলাম না। এক বালিশে রাতের পর রাত কাটিয়ে দিয়ে যেখানে তোমার মন আলিঙ্গন করতে পারলাম না, সেখানে আমিই ব্যর্থ। আমার অহেতুক ভালবাসা তোমার হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি।

দু চারদিনের প্রেমিকা হারাবার ভয়ে ন্যাকা-কান্না কতশত। অথচ একটাবার আমাকে হারাবার ভয়ে তোমার চোখ মুখ ভার হয়নি। বারংবার তুমি সম্পর্কের বিচ্ছেদ ও চেয়ে বসেছো।

দু দিনের প্রেমিকার জন্য রোজ রোজ তোমার মন পোড়ে অথচ পাশের বালিশে থাকা মেয়েটার জন্য একটু করুণা ও হয়না।
আমার কান্নায় তোমার মন খারাপ হলেও, মন ছুঁতে পারে না।

অহেতুক ভালবাসা যেখানে থাকে, সেখানে হারাবার ভয় ও থাকে। যাবজ্জীবন এক তরফা ভালবাসা বয়ে বেড়াবার যন্ত্রণা তুমি বুঝবে না।

-কেয়া


বৈশাখের সন্ধ্যা। হুটহাট করেই আকাশ রঙ বদলায়৷ এক গাদা কালো মেঘ জুড়ে নিয়েছে পুরো আকাশ।

আবির এবং মেঘলার সম্পর্কের আজ ৪ বছর পূর্ণ হলো। এমন দিনে হাঁসি লেপ্টে থাকবে ঠোঁটের কোনো তা না অলক্ষনে প্রহর কাটছে। আবিরকে জাপটে ধরে সে কি কান্না মেঘলা। বছর দুয়েক যাবৎ বিয়ের কথা আসাতে সম্মতি দেয়নি মেঘলা। বিনিময়ে বাবার অহেতুক কথা শুনেছে। এবার আর না বলার সুযোগ ও নেই।

ওদিকে আবির এবং মেঘলা এক সাথেই পড়াশোনা করে। সমবয়সী প্রেম। মেঘলার বিয়ে ঠিক হচ্ছে। আবির কি করবে, চিন্তায় সারা রাত্রী কাটে মাত্র দুয়েক প্রহরের চোখের বিশ্রামে।

সেদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই বাবা বললো বড়ঘরের ছেলে দেখতে শুনতেও বেশ ভালো। চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতন থাকবি।

মেঘলা নরম স্বভাবের মেয়ে। বিশ্রীরকমের সৌন্দর্য্য ঢেলে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা ওকে। মেঘলা কে অপছন্দ করার সুযোগ নেই। যে কেউ ওকে দেখে মুগ্ধ হবে।

ছেলের বাড়ির লোকেরা মেঘলা কে ভীষণ পছন্দ করলো। রাতারাতি বিয়ের দিন তারিখ ঠিকঠাক।

ওদিকে আবির একটার পর একটা সিগারেট ফুকিয়ে যাচ্ছে। কিই বা করবে। বেকার ছেলে আবার বয়স ও অল্প। কিন্তু আবির তো মেঘলা কে ছেড়ে ভালো থাকতে পারবে না। দিন রাত এক হয়ে যাচ্ছে আবিরের কিভাবে কি হচ্ছে কিছুই টের পাচ্ছে না। ওদিকে মেঘলা ও ভালো নেই।

মেঘলা ফোন দিয়ে শেষবারের মতন দেখা করতে চাইলো। বিয়ে হয়ে গেলে আর কখনো হয়তো দেখা করার সুযোগ হবে না। জেল খানার মতন বন্ধি জীবন পার করতে হবে। আবির অপেক্ষা করছিলো মেঘলার জন্য। ওর আসতে মিনিট বিশেক দেরি হলো। বাসা থেকে বেশ কায়দা করে বেরিয়েছে। ওদিকে বাসায় কত আনন্দ হৈ হুল্লোড়।

আবির কে দেখেই মেঘলা জাপটে ধরলো এবং চোখের অশ্রু যেন সাগর হয়ে ঝরছে। একে অপরকে ছাড়া ভালো থাকবে না।

আবিরঃ আচ্ছা মেঘলা, তুমি আমাকে ছেড়ে কতটা সুখী থাকবে?

মেঘলাঃ ও সুখের চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো। যেখানে তুমি নেই, সেখানে আমি সুখ খুঁজে পাবো কিভাবে বলো তুমি।

আবিরঃ যাবে আমার সাথে। তুমি আর আমি থাকবো আর কেউ না।

মেঘলাঃ হুম চলো না। আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না।

বিয়ের আগ মুহুর্তে মেঘলা পালিয়ে গেলো আবিরের সাথে।

ওদিকে ছেলে পক্ষ হাজির। এদিকে মেয়ের খোঁজ নেই। বহু খোঁজাখুজির পরেও পাওয়া গেলো না। মেঘলার বাবাকে অনেক লঞ্চনার স্বীকার হতে হলো।

জানাজানি হতে আর বাকি নেই মেঘলা আবিরের সাথে পালিয়ে গেছে।

যে মেয়ের জন্য আমার সমাজে মুখ নেই ওরকম মেয়ে আমার চাই না। ত্যাজ্য করে দিবো। অহেতুক কথাবার্তা বললো মেঘলার বাবা।

আবির এবং মেঘলা বিয়ে করে নিয়েছে। কয়েক দিন বাহিরে থেকে মেঘলা কে নিয়ে বাসায় ফিরে গেলো। আবিরের পরিবার মেনে নিলো এবং সাদরে গ্রহণ করলেন পুত্রবধূকে।

বছর দুয়েক হলো বিয়ের। এর মধ্যে আবিরের ছোটখাটো একটা চাকরি ও হয়েছে। সুখেই দিন যাচ্ছে। ইদানীং অফিস থেকে বেশ সময় করে ফিরে আবির। কারণ জানতে চাইলে বললো কাজের চাপ বেশি।

এরমধ্যে আবিরের মনে যায়গা করে নেয় অফিসের কলিগ রিয়া।

আবির সময়মত বাসায় ফেরে ও না ইদানীং। দিনদিন বেশি খামখেয়ালী শুরু করেছে ও। অফিস শেষ করেই ঘুরতে বের হয় রিয়াকে নিয়ে। আর ওদিকে মেঘলার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে আবির।

মেঘলা এমন অশান্তি মেনে না নিতে পেরে তদন্ত জুটাবার কান্ড জুগালো। এবং জেনেও গেলো ওদের সম্পর্কের কথা।

রাত পৌনে বারোটা। আবির বাসায় এসেছে।
– কি ব্যাপার এত লেট যে?
– ব্যস্ত ছিলাম কাজে।
– কাজে নাকি রিয়ার সাথে?
-কি বলছো এসব তুমি মেঘলা?

– রিয়া কে?
— আমার কলিগ।
-কলিগ নাকি প্রেমিকা?
— হুম। প্রেমিকা। সমস্যা?
তাহলে আমি কে?
— তুমি বউ।

নিজেকে অন্যের কাছে বিক্রি করেছো কিসের অভাবে? ভালবাসার অভাব তো বলতে পারবে না। তোমাকে ভালবেসেই নিজের বাবা-মা পরিবার ছাড়লাম আর তুমি? তুমি অন্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেললে। সারাজীবন ভালবেসে আগলে রাখবে, অন্য কেউ আসবে না তোমার জীবনে তাহলে কই সেসব কথা?

দেখো মেঘলা মানুষ যাবজ্জীবন এক থাকে না। মানুষের অনুভূতি বদলায়। বলেছিলাম রাখতে পারিনি। এখন কি করতে হবে বলো?

তোমার আমার জন্য নিয়ম ভঙ্গ করতে হবে না আবির। ভালোবাসি তো তোমায়। তোমার ভালো থাকায় আমার ভালো থাকা। তখন ও তোমার ভালো থাকা চিন্তা করে সব ছেড়েছি এখন না হয় তোমার ভালো থাকার জন্য তোমাকেই ছেড়ে গেলাম।

ভালো থেকো আবির। সারাজীবনের জন্য হারিয়ে যাচ্ছি। আর খুঁজতে এসো না। নতুন মানুষ নতুন সংসার নিজেকে নতুন করো আবিষ্কার করো।

ওদিকে মেঘলা চলতি ট্রেনে মাথা গুঁজে যাবজ্জীবনের জন্য দুনিয়া ছাড়লো।

তুমি আমার হলে না
-কেয়া


তামান্না আহমেদ কেয়া
আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর

মতামত দিনঃ