প্রিয়তম অপ্রাপ্তির জন্য একচিলতে কথামালা

সুমাইয়া আহমেদ


প্রিয়তম অপ্রাপ্তির জন্য একচিলতে কথামালা 1

সদ্য আগুনঝরানো লাল টকটকে ফুলগুলোর নিচে তুমি দাঁড়িয়ে আছো। আচ্ছা, তোমাকে কি কখনো বলা হয়েছিলো কৃষ্ণচূড়া আমার ভীষণ প্রিয়?

জানো আমি তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন খুব বৃষ্টি ঝড়ছিলো। আকাশ মহাউল্লাসে ঝরঝর শব্দ আমাকে অন্যসময়ের মতো মুগ্ধ করেনি। আমি সেদিন আমার ট্রেন টা তোমায় আরো কিছুক্ষণ দেখার লোভে মিস করলাম। আমি বড় হিসাবী মানুষ জানো, বাড়ি যেতে তাই এসি গাড়ির বদলে লোকাল ট্রেন খুঁজি? কফি আমার ভালোই লাগে কিন্তু কফির নামের ট্যাগ দিয়ে চায়ের চেয়ে যেই বাড়তি দামটুকু নেয় তা আমার পছন্দ নয়। কিন্তু লোভে পড়ে ১০০ টাকার কেনা টিকিট-টা জলাঞ্জলি দিলাম।

তুমি এখন আস্তে আস্তে আগুনরঙা ফুলের শেষ ছায়াটুকে মাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছো, খানিকটা চলে যাচ্ছো আমার দৃষ্টিসীমার বাইরেও। এখন আমার ইচ্ছে করছে বাজপাখি হয়ে যেতে। কারণটা বুঝতে পারছো তো? তোমাকে আরেকটু দেখার লোভে আমি বাজপাখি বনে যেতে পারিনা?

বাগানবিলাস আমার একটুকুও পছন্দ ছিলোনা জানো?

তুমি হাসতে হাসতে তোমার চশমাপড়া গোলগাল বান্ধুবীকে বললে, “বাগানবিলাস প্রিয় জানিস?”

ব্যাস, আমি বাড়ি গিয়ে জানালার ধারের বাগানবিলাসের একটা ডাল জানালায় জড়িয়ে দিলাম। কি ভাবছো, আমি তোমার হাতে বাগানবিলাস তুলে দিতে চাই?

ধুর, সাধ্যের বাইরের কল্পনা করতে ভয় লাগে। এর চেয়ে ভালো সূর্য, নক্ষত্রের মতো এক উজ্জ্বল কল্পনার রূপ হয়ে এক আকাশ দূরত্বেই তুমি থাকো। আবার যেদিন দেখা হবে, শুধুই দেখবো। তুমি লালরঙা গালিচার পথ মাড়িয়ে এক আকাশ দূরত্বের চেয়ে কিছু বেশি দূরে পৌঁছে গেছো। তখনো আমি লিকলিখে সবুজ গালিচায়,মাথায় এই ৩২° সেলসিয়াস রোদের রাগ নিয়ে তোমায় দেখা সাঙ্গ করছি।

এক হাত রাস্তার দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা তোমাকে দেখলে আমার ইচ্ছে করে শুধু একবার জিজ্ঞেস করতে, “ভালো আছো আসমানী?”
ভুলভাল নাম সম্ভোধনে চমকে উঠবে তখন, আর উত্তরে কি বলবে তার জন্য অপেক্ষায় বিভোর হবো আমি।

তুমি এখনো রাস্তার উপাশ ধরে হাটছো। রাস্তা পার হয়ে কি তোমার পিছু নিবো? . . .না।

পিচঢালা রাস্তার বেড়িবাধ যেন কড়া শাসনে দমিয়ে দিয়ে উদ্বাস্তু বলে,” যাসনা।”

এই পিচঢালা রাস্তার মোড়ের দোকানে কতশত বার চায়ের কাপে ধোঁয়া কবিতার ছবি লিখেছি তুমি কোনোদিন তা জানবেনা। আমার মাউথ অর্গানের তীক্ষ্ণ শব্দে তোমার নাম যে কতবার তারস্বরে বলে হয়েছে তুমি কোনোদিন তাও জানবেনা। বিকেল ঘনিয়ে রাত্রি গড়ালেই আমি ঘুমোতে যাই। আর মনে মনে চাই,আরও আঁধার নেমে আসুক পৃথিবীতে’। সেভাবেই তাদের উচ্ছ্বাস। আকাশে চাঁদটাকে একা করে আমার ঘুমাতে ইচ্ছে করেনা। আমি চাই রাতের আকাশ আরও নির্মেঘ, স্বচ্ছ, কৃষ্ণকায় হোক। কবিদের প্রিয় চাঁদ ও জ্যোৎস্না, উভয়েই আমার কাছে তখন একদম ভিলেন। তাই ভিলেন চাঁদ অস্ত যাক, নগর ভরে থাক মিশমিশে কালচে নীল অন্ধকারে। রাত্রি জুড়ে প্রকৃত আঁধার নামুক, আমি অন্ধকারের জগতের চাদর টেনে কল্পনার কৃষ্ণচূড়া মস্তিষ্কে নিয়ে ঘুমবো, যা কখনোই তোমার সাথে হাতবদল করার দুঃসাহস আমি করিনি।

আমার ভাবলেশহীন পথচলার সূক্ষ্ম অভিনয়ে আমার দুরুদুরু হৃদকম্পনের অস্থিরতা তোমার হাসিকে কোনোদিক
দ্বিধাবিভক্ত করেনি। আমার তো মনে হয় তুমি শুধুই হাস্যমানবী, মোনালিসার ছবিতে যেমন সে শুধুই গম্ভীরচিত্ত, তুমি তার বিপরীতে উচ্ছ্বাসভরা এক সৃষ্টি। আমার হাতে রাখা ফুলগুলো কয়েকদিন পর শুকিয়ে যাবে, তারপর যদি কোনো একদিন তুমি ভুলক্রমে আমার দিকে চোখ ফেরাও, আমি আমার শুকনো ফুলগুলো ছুঁয়ে দেবো। ফুলেদেরও জানা উচিত, গাছবিচ্যুতির কারণটুকু।


লেখিকাঃ সুমাইয়া আহমেদ

মতামত দিনঃ