নাসা-র পাঠানো পারসিভেয়ারেন্স রোভার মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্বের সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে।

‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, জেজেরো ক্রেটারে (Jezero Crater) একটি শুকনো নদীর তলদেশ থেকে ২০২৪ সালে সংগ্রহ করা “স্যাফায়ার ক্যানিয়ন” (Sapphire Canyon) নামের একটি পাথরের নমুনায় সম্ভাব্য জৈব-স্বাক্ষর (biosignatures) পাওয়া গেছে। যদিও এটি এখনও নিশ্চিত প্রমাণ নয়, কিন্তু ভিনগ্রহে প্রাণের খোঁজে এটি এক বিশাল অগ্রগতি।

এই পাথরের নমুনাটি নেওয়া হয়েছিল “চেইয়াভা ফলস” নামের একটি জায়গা থেকে, যা একসময় জলের প্রবাহে তৈরি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। রোভারের যন্ত্রগুলো পরীক্ষা করে দেখেছে যে, এই পাথরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জৈব কার্বন, সালফার, ফসফরাস, কাদামাটি এবং জারিত লোহা রয়েছে। পৃথিবীতে এই উপাদানগুলো জৈবিক পদার্থকে সহজে নষ্ট হতে দেয় না। যদি মঙ্গলে কখনো প্রাণ থেকে থাকে, তাহলে এই উপাদানগুলোই হয়তো তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জুগিয়েছে।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এই পাথরের মধ্যে ভিভিয়েনাইট এবং গ্রেগাইট নামের কিছু খনিজের বিন্যাস। এদের গঠন দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো চিতার গায়ে ছিট ছিট দাগ। পৃথিবীতে এমন ধরনের খনিজ প্রায়ই পচে যাওয়া জৈব পদার্থ বা অণুজীবের কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই খনিজগুলো প্রাণ ছাড়াও তৈরি হতে পারে, তবে তার জন্য অনেক বেশি তাপমাত্রা বা অ্যাসিডিক পরিবেশের প্রয়োজন হয়, যা মঙ্গলের এই অংশে নেই।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, একসময় সেখানে থাকা অণুজীবেরা এই খনিজগুলো ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করত। আরও অবাক করা ব্যাপার হলো, এই পাথরগুলো তুলনামূলকভাবে নতুন। এর আগে বিজ্ঞানীরা ভাবতেন যে, মঙ্গলে যদি কোনো প্রাণের চিহ্ন থাকে, তাহলে তা কেবল খুব পুরোনো পাথরগুলোতেই পাওয়া যাবে। কিন্তু এই আবিষ্কার প্রমাণ করছে যে মঙ্গল আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি দিন ধরে বাসযোগ্য ছিল।

এই গবেষণাটি এখনো চূড়ান্ত নয়, কারণ অ-জৈবিক কারণেও এমনটা হতে পারে। তবে এর ফলাফল এতটাই জোরালো যে এটি বিজ্ঞানীদের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। এই তথ্যগুলো এখন অন্যান্য বিজ্ঞানীরাও স্বাধীনভাবে বিশ্লেষণ করতে পারবেন। আর এই নমুনাটি ভবিষ্যতে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। যদি এটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হয়, তাহলে তা হবে মানব ইতিহাসের একটি অসাধারণ মুহূর্ত।



সূত্রঃ নাসা