তথ্য জানার অধিকার আছে সবার, কিভাবে এই আইনের প্রয়োগ করবেন?


আরটিআই (RTI: Right to Information) এর কথা আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন না। আমিও জানতাম না এই বেশ কিছুদিন আগে। আসলে আমাদের এই পঁচে গলে যাওয়া সিস্টেমে সিস্টেম লস টাই একটা সাধারন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে কোন একটা সেবা নিয়ে না জানাটাই স্বাভাবিক।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ আইন এবং দপ্তর সমুহের কি কাজ এবং আমাদের অধিকার কি তা বেশিরভাগ জনগনই জানি না। আমাদের জানতে দেয়া হয় না। আর জানি না বলেই এর ফায়দা ওঠায় অনেক মহল। জায়গায় জায়গায় ঘুষ, দালালি আর সুপারিশ এর কারবার।

অনেক সময় ভয়ে চ্যালেঞ্জ করেন না, অনেক সময় অজ্ঞতার কারনে। আসুন জেনে নেয়া যাক তথ্য কমিশন আপনার জন্য কি করতে পারে? আপনি কিভাবে এর সুবিধা নেবেন?

তথ্য জানার অধিকার আছে সবার, কিভাবে এই আইনের প্রয়োগ করবেন? 1

তথ্য অধিকার আইনে উল্লেখিত যে কোন সরকারী/বেসরকারী সংস্থার প্রয়োজনীয় তথ্য জানার অধিকার বাস্তবায়নে এবং আপনার যাচিত তথ্য খুঁজে বের করায় আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারি।

তথ্য কমিশন যে কোন নাগরিকের নিকট থেকে তথ্য না পাওয়া সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ করে থাকে। এ সংস্থাটি তথ্য অধিকার আইন এবং এর অধীন প্রণীত বিধিমালা বাস্তবায়নকল্পে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আমাদের মূল কাজ হচ্ছে, আমরা সকল সরকারী ও সরকারী বা বিদেশী সাহায্যপুষ্ট সকল বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্যাদি পেতে জনগণকে সহায়তা করি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য প্রদানে উৎসাহিত ও বাধ্য করে থাকি।

তথ্য না পাওয়া সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি করি। আর কেউ মিথ্যা বা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সরবরাহ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমরা তথ্য অধিকার সংরক্ষণে গবেষণা করি এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করি।

সোর্সঃ infocom.gov.bd


কাজেই নিজে জানুন এবং তথ্য জানতে চান। কিভাবে আপনি এই তথ্য কাজে লাগাতে পারবেন তা নিয়ে মাহবুব কবির মিলন [Member (Joint Secretary), Bangladesh Food Safety Authority at Government of Bangladesh] এর একটা ফেইসবুক পোস্ট আমি কোট করছি। তাকে ফলো করতে পারেন ফেইসবুকেঃ https://www.facebook.com/milonctg2012

আমাদের অনেক ভেজালের ভিড়ে যারা সৎ ভাবে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি তাদেরই একজন।

সিরিয়াস টিপস। সিরিয়াস বাঁশ। সিরিয়াস কল্যাণ। আপনার ফাইল আটকে আছে বিনা কারণে। টাকা ছাড়া ছাড়বে না। আপনি কাজ পাচ্ছেন না। কাগজপত্র সবঠিক আছে। কিন্তু ঘুরাচ্ছে, কোন উত্তরও পাচ্ছেন না। আপনি টেন্ডারে লোয়েস্ট হয়েছেন, দুই নাম্বারি করে অন্যজনকে কাজ দিয়ে দিয়েছে। আপনি জানতে পারছেন না কিছু। মুখ কাল করা ইমো নিয়ে ঘুরছেন।

সব জমা দিয়েছেন, কাগজ পাচ্ছেন না। ঘুরছেন আর ঘুরছেন। পাসপোর্ট বলেন, আর নামজারী বলেন। কিংবা পুলিশ ভেরিফিকেশন অথবা লাইসেন্স বা পারমিশন। জুতার তলা ক্ষয় করার কারণ জানতে পারছেন না। আর কারণ থাকলে না জানবেন। কারণ তো একটাই। টাকা।

টাকাও দেবেন না। কিংবা দরকষাকষিতে মিলছে না। করবেন কি? যেহেতু কারণ ছাড়াই আপনি হেনস্থা হচ্ছেন, রাস্তা একটাই। যিনি আটকে রেখেছেন তাঁকে জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা।

দুই নাম্বারীর গন্ধ পাচ্ছেন, তথ্য পেলে বাঁশ নিক্ষেপ করতে পারবেন। কিন্তু তথ্য পাচ্ছেন না।

মজার কথা বলি। এর আগে তো ভোক্তার কথা বলেছি। এক ভাই লিখেছেন, তাঁর কাজ বেসরকারী ব্যাংক আটকে রেখেছে, শুধু ঘুরাচ্ছে। ভোক্তায় অভিযোগ করা যাবে কিনা।

আমি বললাম, আপাতত যাবে না। কারণ, ভোক্তা আইনে ব্যাংকের সেবা নেই।
ভাইজান এক কাঠি সরেস। ব্যাংকে ফোন করে ভোক্তার ভয় দেখিয়েছে। সাথে সাথে কাজ হয়ে গেছে এবং শুক্রবার বন্ধের দিন ব্যাংক কর্মকর্তা ফোন করে ক্ষমা চেয়েছে।

এবার আসল কথা। নিচে কমেন্টে ফর্মের লিংক দিয়ে দিলাম। প্রত্যেক বিভাগের প্রধান কার্যালয়ের এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একজন করে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার বিবরণ দেয়া আছে। যাকে বলে আরটিআই (রাইট টু ইনফরমেশন) কর্মকর্তা। আপনি আরটিআই আইন অনুযায়ী সেই ফর্ম ফিলাপ করে প্রধান কার্যালয় বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আরটিআই অফিসার বরাবর আপনার কাজ না হওয়ার বা ফাইল আটকে থাকার কারণ জানতে চেয়ে অভিযোগ পাঠিয়ে দিন। আইন অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে তা সম্পন্ন করতেই হবে।

তথ্য জানার অধিকার আছে সবার, কিভাবে এই আইনের প্রয়োগ করবেন? 1

তথ্য জানার অধিকার আছে সবার, কিভাবে এই আইনের প্রয়োগ করবেন? 2

২য় ছবিতে উদাহরণ হিসেবে রেল মন্ত্রণালয়ের আরটিআই অফিসারের বিবরণ দেয়া হল। ৩০ দিনের মধ্যে আপনি উত্তর না পেলে আপিল কর্তৃপক্ষের নিকট আবার তা পাঠাবেন।

মনে রাখবেন সরকারি/আধা সরকারী দপ্তরের জন্য ভয়াবহ এক আইন এই আরটিআই আইন। আপনার তথ্য চাওয়ার ফর্ম পাওয়ার সাথে সাথেই দেখবেন কাজ হয়ে গেছে।

শতভাগ গ্যারান্টি দিচ্ছি। শুধু এই আইনের ব্যবহার করেই দেশ থেকে অর্ধেক অনিয়ম দূর করা যায়।

তথ্য পেয়ে কি করবেন? ছিদ্র পেলে তার সদ্ব্যবহার করবেন। দুদক আছে, পত্রিকা আছে।

ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই আইন করার জন্য। অনেকেই জানে না, আপনি কি করেছেন।

দরকারী ওয়েবসাইটঃ

এবার নিজের কিছু কথা বলা যাক। আমাদের সর্ষের মধ্যেই ভুত থাকে। এই ভুত তাড়ানোর চেষ্টা আমাদেরই করতে হবে। শুধু মাত্র অল্প কিছু মানুষের ঠেলাতে এই ভুতেরা পালাবে না। অনেক হতাশার দেশে থেকেও আমরা একটু একটু করে আগাচ্ছি।

আপনি নিজে পরিবর্তন হলেই দেশ পরিবর্তন হবে। অনিয়ম দেখলেই আওয়াজ তুলুন। হয়ত এই আওয়াজ একসময় ঝড়ের গর্জনে ধুলোবালির মত অনিয়মগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

মতামত দিনঃ