Travelers - সাইফাই টিভি সিরিজ
-
গল্প
-
অভিনয়
-
মিউজিক
-
সিনেমেটোগ্রাফী
Travelers - ভবিষ্যতের মানুষের বর্তমানের গল্প
প্রায় কয়েকশ বছর ভবিষ্যতের কথা, মানুষ ততদিনে আবিষ্কার করেছে কিভাবে তাদের স্বত্তাকে সম্পূর্নভাবে অতীতে ফেরত পাঠানো যাবে। ভবিষ্যত থেকে বেশ কিছু মানুষকে একুশ শতকে ফেরত পাঠানো হল। এরা এখানে এসে দখল করে নেয় বিভিন্ন সাধারন মানুষের জীবন।
নানা জায়গায় নানা সময়ে ভবিষ্যতের মানুষ এসে একুশ শতকের মানুষের জীবন দখল করে নিলেও তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই, ভবিষ্যতকে বাঁচানো।
যে ভুলগুলোর কারনে মানব প্রজাতি প্রায় ধ্বংসের মুখে চলে গিয়েছিল, সেই ভুলগুলো থেকে ২১ শতকের মানুষকে নিবৃত্ত রাখাই এই ভবিষ্যতের মানুষদের কাজ।
এদের মধ্যে একজন এফবিআই এজেন্ট, এক সন্তানের জননী, কলেজ ছাত্র – এই কয়েকজনের জীবনে ঢুকে পড়ে ভবিষ্যত থেকে পাঠানো একটা দল। গল্প আগায় এদের নিয়েই। পদে পদে তারা বুঝতে পারে ভবিষ্যতকে রক্ষা করা যতটা কঠিন, তার থেকেও কঠিন আরেকজনের জীবনকে নিজের বলে যাপন করা।
অসাধরন মনস্তাত্ত্বিক আর বিজ্ঞানের কিছুটা পাশ ঘেষে চলে গেছে ট্রাভেলারস – Travelers সিরিজের গল্প।
যদি আবার সময়ের পেছনে ফিরে যেতে পারতেন তবে কি করতেন? জীবনে একবার হলেও সময়ের পেছনে গিয়ে নিজের ভূল শোধরাতে চায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। আমি নিজেই কতবার মনে মনে ভেবেছি যদি বছর দশেক আগে এই কাজটা না করতাম তবে কেমন হোত জীবনটা! কিন্তু হায়, সময় কি আর ফিরে পাওয়া যায়?
ট্রাভেলারস টিভি সিরিজটা এই সময়ের পেছনে গিয়ে বর্তমান পরিবর্তনের গল্প। যে বর্তমানের সুতোর বুনোটে ভবিষ্যতের মানুষ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বসেছিল, সেই ভবিষতের কিছু মানুষ আবিষ্কার করে বসে স্ময়ের পেছনে যাবার এক পদ্ধতি। তারা নিজেদের সম্পূর্ন চেতনা পাঠিয়ে দিতে পারে একুশ শতকের কোন মানুষের শরীরে। তারপর আর সেই মানুষটার অস্তিত্ব থাকে না। পুরোপুরি সে হয়ে যায় ভবিষ্যতের মানুষ। শরীর আর জীবন এই শতকের কিন্তু সত্ত্বা দখল করে আছে ভবিষ্যতের কোন মানু্ষের চেতনা।
আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও এই প্রযুক্তি অনেক ভয়াবহ ভাবে মানুষের গোপনীয়তা আর জীবন কেড়ে নিতে পারে। তাই এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করা হত। কে কখন মারা যাবে আর কার সোশ্যাল স্ট্যাটাস কি সেটার উপর নির্ভর করেই ভবিষ্যত থেকে মানুষ (চেতনা) পাঠানো হত। আর পুরো ব্যপারটি ছিল ডিরেক্টর নামে একটা AI (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এর হাতে। ডিরেক্টর ঠিক করত যাকে পাঠানো হচ্ছে সেই ট্রাভেলার কোন দলের সাথে কাজ করবে আর তার কাজ কি হবে?
গল্পের মূল ভাবনা ইউনিক না হলেও কিছুটা নতুনত্ব আছে। টাইম ট্রাভেল সাইফাই ভক্তদের পছন্দের তালিকার প্রথম দিকে থাকে সব সময়। Travelers – এ টাইম ট্রাভেল করে সময়ের পেছনে চলে যাওয়া আর ভবিষ্যতের কোন সমস্যা শোধরানোর যে চেষ্টা, এটা আমরা অনেক মুভি এবং টিভি সিরিজে সেই আশির দশক থেকে দেখে আসছি। এর সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরন হতে পারে Terminator মুভি সিরিজ।
নতুনত্ব আছে অভিনয়ে…। “চেতনা সময়ের পেছনে পাঠিয়ে অতীতের আরেকজনের জীবন দখল করে নেয়া” – এই কনসেপ্টেও একে পাশ মার্কের বেশি দেয়া যায়। ব্যাক্তিগত সম্পর্ক, মিশন আর মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার যে টানাপোড়ন ভবিষ্যত থেকে আসা মানুষটিকে পোহাতে হচ্ছে এটা বেশ কম সাইফাই সিরিজেই দেখা যায়।
কিছু কিছু চরিত্র গল্পের সাথে এমন মিশে গেছে যে তাদের জীবন্ত বলে মনে হয়। নিজের অজান্তেই তাদের ব্যক্তিগত জীবনের উপর রাগ লেগে যায়। যেমন, পুলিশ অফিসারে চরিতের জেফ (J. Alex Brinson) তার সেরাটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে। মাঝে মাঝে তার অভিনয় এত জীবন্ত লেগেছে যে মনে হয়েছে এই চরিত্রটি মরে গেলেই বেশি ভালো লাগত।
মূল চরিত্রদের মধ্যে এফবিআই এজেন্টের চরিত্রে Eric James McCormack অসাধারন ভাবে সপ্রতিভ ছিলেন।
একটা টিভি সিরিজ যেটা সহজেই বোঝা যায় এবং যার প্রতিটা প্রতিটা পর্ব শেষ হলে পরের পর্বে কি হতে পারে তা জানার জন্য ব্যকুলতা জাগে এরকম টিভি সিরিজ দেখতে কে না ভালোবাসে?
তিন সিজনে শেষ হয়েছে Travelers এর গল্প। প্রথম সিজনে পুরো ব্যাপারটি বুঝতেই দর্শকের একটু সময় লেগে যেতে পারে। তবে সাইফাই ভক্তদের চটজলদি ভালোবাসা নাও জন্মাতে পারে। এক দুই পর্ব দেখার পরে আগ্রহ জন্মে যায় সিরিজে। ছোট ছোট মিশনে কিভাবে তারা মানুষের ভবিষ্যতকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে আর সাহায্য আসছে ডিরেক্টরের কাছ থেকে, এটা দেখতে দেখতে কখন যে গল্পে জমে যাবেন বুঝতেই পারবেন না।
পুরো গল্প বলে দিলে চমক থাকে না। তবে নিঃসন্দেহে এটা আমার দেখা অন্যতম একটা সাইফাই সিরিজ। সময় করে দেখে নিন।