Dark - সাইফাই, ফ্যান্টাসি টিভি সিরিজ রিভিউ
-
গল্প
-
অভিনয়
-
মিউজিক
-
সিনেমেটোগ্রাফী
DARK - অন্ধকারের মতই এক রহস্যময় কল্পকাহিনী
জার্মানীর ছোট্ট এক শহরের দুটি বাচ্চা হারিয়ে যায়। তাদের খুঁজতে গিয়ে একের পর এক বেরিয়ে আসে শহরের ভাংগাচোরা গোপন অতীত। সেই সাথে চারটা পরিবার যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত বিভিন্নভাবে, তাদের সম্পর্কের টানাপোড়ন, প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা সব কিছু চলে আসে সামনে।
Dark – সিরিজে টাইম ট্রাভেল আছে, অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা আছে আর আছে প্লট টুইস্টের অসাধারন সব মুহূর্ত। মূল সিরিজ জার্মান ভাষায় করা।
ভাষাঃ জার্মান
মিউজিকঃ Apparat
লেখকঃ Ronny Schalk, Jantje Friese
Dark – কোন অন্ধকারের গল্প নয়। ইউটিউব ট্রেইলারে যে গুহার আধিভৌতিক উপস্থাপন হয়েছে তার সাথেও Dark – মূল গল্প যায় না। এই সিরিজের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় টাইম ট্রাভেল, টাইম প্যারাডক্স, প্যরালাল ওয়ার্ল্ড, ক্রিয়েশন ইত্যাদি নিয়ে।
আমার মনে পড়ে না শেষ কোন সাই-ফাই টিভি সিরিজ এত লম্বা সময় নিয়ে দেখেছি। অনেকেই যখন আমাকে জিজ্ঞেস করত ডার্ক দেখেছি কিনা, আমি না সূচক মাথা দোলালেই তারা বিস্মিত হত! একজন সাইফাই ভক্তের জন্য DARK – না দেখা যেন অপমানের একটা বিষয়। শেষ পর্যন্ত কোমর বেঁধে এই সিরিজ দেখতে বসেই গেলাম।
জার্মান ভাষায় করা এই সাইফাই সিরিজ দেখতে বসলে প্রথমেই আপনার জার্মান সিনেমেটোগ্রাফীর সাথে পরিচয় ঘটবে। মূলভাষা জার্মান হলেও আমি দেখেছিলাম ইংরেজীতে ডাব করা ভার্সন। সে কারনেই হয়ত কিছুটা খাপছাড়া লেগেছে আমার প্রথমদিকে। যারা হার্ডকোর সাইফাই পছন্দ করেন তাদের একটু বিরক্তি ধরে যেতে পারে গল্পের অতি ধীর গতির কারনে।
কিন্তু গল্প আগায়… জার্মান এক ছোট্ট শহরের গল্প। এখান থেকে দুটো বাচ্চা হারিয়ে যায়, তাদের খুঁজতে গিয়ে শহরের অতীত, চারটি পরিবারের নিজেদের মধ্যে থাকা নৈতিক-অনৈতিক সব সম্পর্ক একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে। শুরু হয় সন্দেহ আর গোপনীয়তার অন্যরকম একটা জাল। সবাই সবার কাছ থেকে কিছু একটা লুকানোর চেষ্টায় আছে বলে মনে হয়।
সিরিজে টাইম ট্রাভেল আসে অনেক পরে। এটা বুঝতে বেগ পেতে হতে পারে আপনার। সময় যেখানে অতীত আর ভবিষ্যতের সাথে একটা গিট্টু পাকিয়ে ফেলে সেই গুহাটাকে হাইলাইট করে DARK – এর পোস্টার বানানো হলেও গুহাতে আসলে ভীতিকর কিছু ছিল না।
এই সিরিজের সময় নিয়ে যে প্যারাডক্স তৈরি হয় তা ১৯৫৩, ১৯৮৬, এবং ২০১৯ এই তিন সময়ের ঘটনা প্রবাহের সাথে জড়িত। ঘটনার জট অনেকটা পেঁয়াজের খোসার মত। যখনই মনে হবে বুঝে গেছেন রহস্যটা কোথায় তখনি আরেক ধাপের টুইস্ট এসে উপস্থিত হয়। তবে সব শেষে একের পর এক পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মত মূল জায়গায় দর্শক পৌছায়।
তার আগে যারাই ধৈর্য ধরে এই তিন সিজনের পুরোটা দেখতে পারবেন, তাদের জন্য লাল সালাম। কে যে কখন কোন সময়ে গিয়ে বসে আছে আর তৈরি করে ফেলেছে সময়ের গোলক ধাঁধা তা চরিত্রদের নিজেদের বুঝতে যেমন সময় লেগেছে তেমনি দর্শক হিসেবে আমারও বুঝতে সময় লেগেছে।
অভিনয়ে সবাই কে দশে দশ না দেয়া গেলেও, এমন মিলিয়ে মিলিয়ে চরিত্র রুপায়ন আর অসাধারন মেকাপের জন্য DARK -এর সকল কুশীলবকে অসংখ্য ধনবাদ। বর্তমান, অতীত আর ভবিষ্যত দেখাতে একজন মানুষের তিনটা চরিত্র তিনজন করেছে, কিন্তু তাও কি অসাধারন নিপুনতার সাথে পরিচালক তা ফুটিয়ে তুলেছন!
জার্মান সিনেমেটোগ্রাফীর সাথে আগেও কিঞ্চিত পরিচয় ছিল কিন্তু Dark – দেখার পরে আরো ভালভাবে বুঝতে পারলাম সাইফাই সিরিজকে কিভাবে একটা ভয়ের আবহ দিতে হয় সেটা।
সিরিজের একটা ডায়লগ খুব মন কেড়েছে আমারঃ “What we know is a drop, what we do not know is an ocean.” স্যার আইজাক নিউটনের বানী।
Dark – দেখার পর আমার নিজস্ব অনুভূতি হল বর্তমান বলে আসলে কিছু নেই। আমরা শুধুই সময়ের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা একটা অনুভূতি মাত্র। এই মাত্রই আপনি এই লেখাটা পড়ে ফেলেছেন মানে এটা অতীত হয়ে গেছে আর ভবিষ্যত ইতোমধ্যেই পরের লাইনে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
সিরিজের কিছু প্যরাডক্সের ব্যাখ্যা প্রথমদিকে আপনার পছন্দ না হলেও একদম ৩য় সিজনে গিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে কি হচ্ছে। সিরিজটা আপনাকে ভাবাবে, বেশ ভাবাবে।
প্রথমতঃ এই ওয়েব সিরিজগুলো আমি দেখার সময় এবং সুযোগ পায় না। তবে, চেষ্টা করি আগাছার মাধ্যমে রিভিউগুলি পরার মাধ্যমে দেখার সুযোগ হয় কিনা। ভার্সিটিতে পড়ার সময় অনেক সময় থাকতো এগুলো দেখার। তবে তখন কোথা থেকে ডাউনলোড করা যেত বা এই রকম সহজ এক্সেস ছিল না। যা, এখন খুব সহজে পাওয়া যায়।
দ্বিতীয়তঃ সাই-ফাই সিরিজ বা মুভি সব সময় আমার ভালো লাগে। তাই অফিসে বসে রিভিউ পড়ে ফেললাম। আর মতামত দিয়ে দিলাম। ধন্যবাদ রনি।
আমি সম্প্রতি একটি ওয়েব সিরিজ দেখেছি। Doctor X জাপানি সিরিজ। অপারেশন থিয়েথারে কি ঘটে এবং জটিল জটিল সার্জারি কিভাবে করা হয়। একজন ফ্রি-লেন্সার সার্জন কিভাবে কাজ করে এগুলো নিয়ে সিরিজটি। আমার খুর ভালো লেগেছে। সময় থাকলে আমিও রিভিউ দিয়ে দিতাম কিন্তু অফিসের পর আর সময় করতে পারি না।
সময় কম থাকলে সবচেয়ে ভালো হয় নেটফ্লিক্সের একটা সাবস্ক্রিপশন নিয়ে ফেলুন।
আর আমাদের কাছে যেকোন সময়ই আপনার যেকোন লেখা পাঠিয়ে দিতে পারেন।