অ্যালিয়ান (সায়েন্স ফিকশন) - বই রিভিউ
Book Title: অ্যালিয়ান
Book Description: ঝট করে উঠে বসে চিৎকার করতে যাচ্ছিল রায়ান। গলাটা হাঁ-ও করল, কিন্তু কোনো শব্দ বের হলো না সেখান দিয়ে। আ আ একটু শব্দ হয়ে থেমে গেল তা। বুকের ভেতরটা ফেটে যেতে চাচ্ছে তার। হাত-পাও তেমন নাড়াতে পারছে না। চোখ দুটোও কেমন স্থির হয়ে আছে। কেবল বোবার মতো তাকিয়ে রইল সে সামনের দিকে।মানুষের মতো অদ্ভুত মূর্তিটা দু পা এগিয়ে এলো রায়ানের দিকে। একটা হাত বাড়িয়ে দিল তার দিকে। রায়ান খেয়াল করল-তারই মতো উচ্চতা ওই অদ্ভুত মূর্তিটার, কিন্তু হাতটা অসম্ভব লম্বা, মানুষের থাকে পাঁচটা আঙ্গুল, ওটার রয়েছে তিনটা।হ্যালুশিনেশনের মতো হাত বাড়িয়ে দিল রায়ানও। অদ্ভুত মানুষটা হ্যান্ডশেক করার ভঙ্গিতে হাত চেপে ধরল তার। সঙ্গে সঙ্গে চোখ দুটো আগের চেয়ে বড় বড় হয়ে গেল রায়ানের। সামনের মূর্তিটা এখন ঠিক মূর্তি নেই, বদলে গেছে, হুবহু তার মতো হয়ে গেছে!রায়ানের সামনে আরেকটা রায়ান দাঁড়িয়ে আছে। হাতটা আরো একটু চেপে ধরে নতুন রায়ান পুরান রায়ানকে বলল, ‘তুমি কেমন আছো, রায়ান?’
Book Author: সুমন্ত আসলাম
Book Edition: প্রথম
Book Format: Hardcover
Publisher - Orgnization: কথাপ্রকাশ
Publisher Logo:
Date published: February 10, 2017
Number Of Pages: 112
-
গল্প
-
প্রচ্ছদ
-
মুদ্রন
-
দাম
সায়েন্স ফিকশন না হলেও কিছুটা গল্প হয়েছে
এই বই কিশোরদের জন্য লেখা, আমি আসলে ভুল করে কিনে ফেলেছি :)। আমার কাছে এটা সায়েন্স ফিকশন লাগেনি আর জায়গায় জায়গায় অহেতুক বর্ননাও ভালো লাগে নি। বইয়ের মূলে একটা গল্প থাকতে হয়, যে গল্পের দিকে পুরো গল্পের পরিনতি এগিয়ে যাবে। হতাশার বিষয় সেটা এই বইতে দেখতে পাইনি। সায়েন্স ফিকশন লেখক হিসেবে সুমন্ত হতাশ করেছেন।
কিশোরদের জন্য লেখা বই, তাদের মত চিন্তা ভাবনা করেই লেখা দরকার। ফ্যান্টাসি সায়েন্স ফিকশন ক্যাটাগরি হলে সেটা আরো যত্ন নিয়ে লেখা দরকার বলে আমি মনে করি।
আমি আসলে ভুল করে এই বই কিনে ফেলেছিলাম। সায়েন্স ফিকশনের প্রতি দূর্নিবার আকর্ষনই এর কারন। কিন্তু পড়ার পরে আমি হতাশ হয়েছি।
গল্পের গভীরতা নেই, চরিত্র গড়ে ওঠা নেই, কেমন যেন গা ছাড়া ভাবে একটা এলিয়েন পৃথিবীতে এসেছে সেটা বলে যাওয়া, সায়েন্স ফিকশন বইতে আমরা যে চমক আশা করি সেটাও এই বইয়ের একদম শেষ পর্যন্ত গিয়ে পাইনি।
সুমন্ত আসলাম মানেই আমার কাছে গভীর জীবনবোধ থেকে লিখে যাওয়া এক লেখকের প্রতিচ্ছবি। তার কাছ থেকে হয়তোবা একারনেই আশাটা আরো বেশি ছিল।
সাদামাটা গল্পের আড়ালে কিছুটা মনের ক্ষোভও ঝেড়েছেন এক জায়গায় সুমন্ত, স্কুলের চেয়ারম্যানের ছেলে বলে সান্টুর অনৈতিক সুবিধা পাওয়া নিয়ে। সুমন্তর প্রতিবাদের গভীর আর তীর্যক ভাষা আমাদের চেনা। কিন্তু একটা ফ্যান্টাসি গল্পের মাঝখানে এই অহেতুক জিনিস তিনি কেন নিয়ে এসেছেন সেটা ঠিক বুঝতে পারিনি। এক সময় মনে হয়েছে গল্প সায়েন্স ফিকশনের আড়ালে বোধহয় গভীর কোন উপলব্ধির দিকে গিয়ে শেষ হবে, এটা বোধহয় আসলে প্রতিবাদী আরেকটা উপন্যাস। কিন্তু হতাশ হতে হয় এর সাদামাটা সমাপ্তিতে।
যে আইডিয়া নিয়ে কাজ করার জন্য অনেক আলোকবর্ষ দূর থেকে রায়ানের সাথে তার এলিয়েন বন্ধু দেখা করতে আসে সেটাও ফালতু। মাইক্রোচিপ শরীরের নিচে স্থাপন করে সবাই কোথায় আছে, কি করছে সেটা মনিটর করাটা একটা বিশাল ঝক্কির কাজ। এত বিলিয়ন মানুষের জন্য সেটা ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। মোটের উপর এটা ব্যাক্তি স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন।
আমাদের সবার হাতেই এখন মোবাইল আছে, খুব সহজেই তাই আমাদের লোকেট করা যায়। পৃথিবীর অনেক দেশে, যেমন চায়নাতে এত এত সিসি ক্যামেরা যে সেখানকার লোকজন এর ভয়ে তটস্ত থাকে সবসময়। সবাইকে ইতিমধ্যে আমরা একটা নাম্বার দিয়ে দিয়েছি, যেখানে রিং করলেই তাকে খুঁজে পাওয়া যায়, তার সাথে কথা বলা যায়। আমাদের বাসে, ট্রেনে, গাড়িতেও জিপিএস লোকেটর আছে, আমাদের ফোনেও আছে, এরপর এই সায়েন্স ফিকশন যদি এসে অহেতুক নতুন আইডিয়ার কথা বলে পুরাতন টেকনোলজির কথাই বলে, যার জন্য এত আলোকবর্ষ দূরের এলিয়েন চলে এসেছে পৃথিবীতে, তবে সেটা আসলে কিশোর মনে খুব একটা গ্রহনযোগ্য হবার কথা নয়।
আমি আসলে সুমন্ত আসলামের কাছে থেকে আরো গভীর কোন কিছু আশা করেছিলাম। বিজ্ঞান বা টেকনোলজির কথা খুব বেশি না লিখেও যে অসাধারন বোধের সায়েন্স ফিকশন গল্পের অবতারনা করা যায় সেটা হুমায়ুন আহমেদের “তারা তিনজন” বইটা পড়লে বোঝা যায়।
সুমন্ত আসলামের এই বইতে পাঠক হিসেবে আমি হতাশ।