আমি যেমন করে বেঁচে আছি এক মৃতের শহরে,
সরকারের হিসাব নিরীক্ষক পদে খুব দক্ষতার সাথে হিসেব কষেছি অন্যের,
নিজের ছেঁড়া জুতো-
ভাঙা ফ্রেমের চশমাটা অনেকদিন
বদলাতে পারিনি;
ঘরের গিন্নি পছন্দের শাড়িটার কথা মুখ ফুটে বলার সাহস করে নি কোনোদিন।
হাঁসফাঁস জীবনে;
অনাদর সুখটাই না পাওয়ার সবথেকে বড় অপেক্ষা।
সুখের আরেক নাম সন্তান মেধাবী
তাই বেচে দিয়েছি সব স্বপ্ন জলের দরে, মেয়েটা কানাডায় স্কলারশিপ পেয়েছিল বলে।
সুখ জমাতে হয়েছিল অনেকদিন ছেঁড়া চটিতে;
ছেলেটা যে-বার বুয়েটে চান্স পেল
সে-বারই সরকারের তরফ থেকে অফিস ট্যুর মালদ্বীপে।
কত গল্প শুনেছি নীল জলরাশির ছোট্টো দেশটির।
সহকর্মীদের বছর বছর বিদেশ ট্যুর
আমার মনের স্বপ্নগুলো বাবুই পাখির মতো নিখুঁত করে বুনছি
একদিন আমিও বিদেশ ভ্রমণে যাবো।
সি-বিচে পাতানো চেয়ারে চিত হয়ে শুয়ে সমুদ্রের টেউ দেখবো,
পায়ের পাতা ভিজিয়ে গিন্নি ফিল্মি স্টাইলে কচি ডাব খাবে,
উছলে আসা ঝিনুক কুড়োবে ছেলেগুলো বেলাভূমি থেকে।
আমার সুষুপ্ত নেত্রমূখ সমুদ্রের মতো বিশাল ফণা তুলে নাচে।
সে স্বপ্ন বিষণ্ণ পাপ!
মেয়েটা কানাডায় সেটেল্ড!
অনেকদিন চিঠির জন্য অপেক্ষা করেছি
এখন ফোনের অপেক্ষায়,
একেকটা চাঁদ-সূর্যকে হাসি মুখে বিদায় দেই।
গিন্নি বোধহয় কাঁদে রাঁধার ঘরে হয়’তো জায়নামাযে
না হয় আমার সামনে
উপায় নেই!
আমার চোখ দু’টো যে তার চোখ খুঁজে পায় না জল মুছে দেওয়ার।
আমার দেহের ছোট্টো ঘরটাতে আরেক জন ঘর বেঁধেছে – অনেকদিন…কোলান ক্যান্সার!
তার সব রাজভোগ খাবার জোগাতেই গিন্নির মাথায় হাত।
ছেলেটা নিজের আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়িতে এয়ারকুলারের ঠাণ্ডায় বসে অন্যের বাড়ির ডিজাইন করে রোজ!
অনেকদিন হয় ফোনে বলেছি আমার আর তার মায়ের জন্য সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরের একটা ডিজাইন করে নিয়ে আসতে।
বলেছিল শুক্রবার এসে দেখে যাবে…
আজও এলো না!
ক্যালেন্ডারের পাতাটা প্রায় শেষ!