The Colorado rocky mountain high
I’ve seen it rainin’ fire in the sky
The shadow from the starlight is softer than a lullabye
Rocky mountain high – John Denver
এই লেখা পড়ার আগে আমার “উল্কা ও উল্কাবৃষ্টি” লেখাটা পড়া থাকলে বুঝতে সুবিধা হবে।
যতগুলো উল্কাবৃষ্টি হয় তারমধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল পার্সেইড উল্কাবৃষ্টি। এর উল্কাগুলো এতই উজ্জ্বল যে, প্রতিটি উল্কাই যেন সহজে মন কাড়ে। শুধু তাই নয়, সৌভাগ্য হলে এই উল্কাবৃষ্টিতে বেশ কিছু অগ্নিগোলক আর বোলাইড এর দেখা মিলতে পারে। উল্কাগুলো কিছুটা হলুদ হয় আর গতি প্রতি সেকেন্ডে ৫৯ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়া এদের গড় উজ্জ্বলতা ২.৩ প্রভা হয়ে থাকে। ক্যাথলিক সেইন্ট লরেন্সের আত্নবলির দুঃখ যন্ত্রনার সম্মানার্থে একে “সেন্ট লরেন্সের কান্না” বলা হয়। তিনি ১০রা আগস্ট ২৫৮ খ্রিস্টপূর্বে মৃত্যুবরণ করেন এবং এ উল্কাবৃষ্টির হার ১২ই আগস্ট সর্বোচ্চ থাকে।
খ্রিস্টপূর্ব ৩৬ অব্দের চীনা কাহিনীতে এদের প্রথম হদিস পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়, “সন্ধ্যায় চারিদিকে ১০০টির বেশি ছোট উল্কা ছুটে যায়”। এছাড়া ৮,৯,১০ এবং ১১ শতাব্দীতেও চীন, জাপান এবং কোরিয়া থেকেও এদের দেখা যাওয়ার অসংখ্য হদিস মেলে। তবে ৭১৪ সাল থেকে এদের নিয়মিত বার্ষিক হদিস রাখা হয়। এই বার্ষিক উল্কাবৃষ্টি আবিষ্কারক Quételet । তিনি ১৮৩৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো এটাকে বার্ষিক উল্কাবৃষ্টি বলে বেলজিয়ামের “Royal Academy of Science of Brussels” – তে রিপোর্ট করেন। অনেকে অবশ্য “Forster”-কে এর আবিস্কারক বলে মনে করেন। কিন্তু উনার কাছে যুক্তিযুক্ত প্রমাণ না থাকায় এ দাবি বিফলে যায়।
এই উল্কাবৃষ্টি ২৩শে জুলাই হতে ২২শে আগস্ট পর্যন্ত চলতে থাকে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি হয় ১২ই আগস্ট। অর্থাৎ ১১ই আগস্ট দিবাগত রাত থেকে ১২ই আগস্ট ভোর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এসময়ে এদের ZHR ১০০ পর্যন্ত হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ZHR ৫০-৭৫ হয়। ১১ ও ১৩ তারিখও এদের মোটামুটি উপভোগ করা যায়৷ ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত ZHR এদের অনেক বেশি ছিলো। উক্ত সময়ে ZHR সর্বোচ্চ ১৪৭ পর্যন্তও হয়েছিলো। কিন্তু ১৯৪৩ সাল থেকে এরা আবার কমে যায় এবং ZHR বেশিরভাগই ৯০ থেকে ৬৫ পর্যন্ত হয়৷
এই উল্কাবৃষ্টির জননী হলো “109P/Swift-Tuttle” ধূমকেতু। একে শুধু “Swift-Tuttle” ধূমকেতু বলেও ডাকা হয়। এটি ১৩৩ বছরে সূর্যকে ১ বার প্রদক্ষিণ করে। আমেরিকান জ্যোতির্বিদ Lewis A. Swift ১৮৬২ সালের ১৬ই জুলাই এটি আবিস্কার করেন। আবার এর কিছুদিন পরেই আরেক আমেরিকান জ্যোতির্বিদ Horace Parnell Tuttle ও একে দেখতে পান৷ দুজন আলাদাভাবে আবিষ্কার করলেও পরবর্তীতে এটাকে যৌথ ভাবে “Swift-Tuttle” নামকরণ করা হয়। তবে, উনারাই যে প্রথম একে আবিষ্কার করেন তা কিন্তু নয়! ৩রা জুলাই ১৭৩৭ সালে Ignatius Kegler নামের একজন জেসুইট মিশনারি একটি ধূমকেতু আবিষ্কার করেন৷ পরবর্তীতে গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে যে, সুইফট-টাটেল ধূমকেতুটিই মূলত কেগলারের সেই ধূমকেতু। তবে, এ উল্কাবৃষ্টির সাথে যে এই ধূমকেতুর সম্পর্ক আছে সেটা দেখান “Giovanni Schiaparelli” নামের একজন ইতালীয় জ্যোতির্বিদ।
ধারণা করা হয়েছিলো ১৯৮১ সালের দিকে এই ধূমকেতু আবার দেখা যাবে। কিন্তু সে আসেনি। অনেক জ্যোতির্বিদ মনে করেছিলেন এটার শেষ আগমনে সূর্যের তাপে এটি অনেক বেশি ভর হারায় ফলে, এটি হয়তো ভেঙে হারিয়ে যায়! কিন্তু না! ১৯৯২ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর “Tsuruhiko Kiuchi” নামের এক সৌখিন জাপানি জ্যোতির্বিদ এই ধূমকেতু পুনরায় আবিষ্কার করেন। কেগলারের ধূমকেতুর কথা মনে আছে? এটাই যে সুইফট-টাটেল ধূমকেতু সেটা কিন্তু তখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই বিষয়টা নিয়ে আমেরিকান সৌখিন জ্যোতির্বিদ G.W. Kronk কাজ করছিলেন। ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ ব্রায়ান জি. মার্সডেন ১৯৮২ সালে কেগলারের ধূমকেতুকে দেখা যাবে বলে ধারণা করেছিলেন, যা বিফলে যায়। তিনি পরে উনার পূর্বাভাসটি রিভাইজ দেন আর তাতে কিছু পরিবর্তন আনেন। ফলে উনার নতুন পূর্বাভাস অনুযায়ী এই ধূমকেতু ১৯৯২ সালে দেখা যাবার কথা এবং যেমনটা বললাম উক্ত জাপানি জ্যোতির্বিদ ধূমকেতুটি দেখেন অর্থাৎ মার্সডেনের পূর্বাভাস সত্যি হয় এবং সাথে এটাও নিশ্চিত হওয়া যায় যে কেগলারের ধূমকেতু আর সুইফট-টাটেল ধূমকেতু মূলত একই ধূমকেতু। আর এ খবর শোনার পর উল্কাবৃষ্টি প্রেমিদের খুশি দেখে কে! সবাই জানে যে সামনের পার্সেইড উল্কাবৃষ্টির এক মহা বিস্ফোরণ ঘটবে! এবং ঠিক তাই হলো। সুইফট-টাটেলের ফিরে আসা মোটেও জ্যোতির্বিদের নিরাশ করে নি। ১৯৯৩ সালের আগস্টের রাতের আকাশ যেনো ভরে উঠেছিল উল্কাবৃষ্টির না, প্রাকৃতিক আতশবাজির মেলায়! ZHR হয়েছিল ২০০-৫০০ পর্যন্ত। তৈরি হয়েছিল এক নতুন ইতিহাস। ইতিহাসের পাতায় ১৯৯৩ সালের পার্সেইড উল্কাবৃষ্টি হলো সর্বোচ্চ দেখা এবং চিত্রায়িত করা এক উল্কাবৃষ্টি। ধারণা করা হয় এমনটা আরেকবার ২০২৮ সালে হতে পারে! কিন্তু এর আগে নয়।
ধারণা করা হয়েছিলো সুইফট-টাটেল ধূমকেতু এর পরবর্তী আগমনে অর্থাৎ ২১২৬ সালে পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবার সম্ভাবনা আছে। জ্যোতির্বিদ মার্সেডেন এই সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন কিন্তু তা পরে বাদ দেওয়া হয়, এর পেছনেও G.W. Kronk এর অবদান আছে। তবে উক্ত সালে একে খালি চোখে দেখা যাবে। তখন এর আপাত প্রভা ০.৭ পর্যন্ত হতে পারে। তবে, ৩০৪৪ সালে এটি পৃথিবীকে ১.৬ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে পাশ কাটিয়ে যাবে এবং ৪৪৭৯ সালে এটি আরো কাছ দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাবে। তখন অবশ্য সংঘর্ষের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু তা নিশ্চিত নয়৷ তবে, যদি পৃথিবীর সাথে এর সংঘর্ষ ঘটে তাহলে ডাইনোসর যে বস্তু দ্বারা বিদায় নিয়েছিল আর সেই বস্তু যে পরিমাণ শক্তি নির্গত করেছিল এটা তার ২৭ গুণ শক্তি নির্গত করবে!
পারসিয়াস মণ্ডলের ইতিকথা
পারসিয়াস মণ্ডলে এই উল্কাবৃষ্টির রেডিয়ান্ট অবস্থিত বিধায় এই উল্কাবৃষ্টির নাম পার্সেইড। পারসিয়াসের গল্প যেন এক মহাভারত। আবার এই গল্পের সাথে আরো কিছু মণ্ডলও জড়িত। আমি সংক্ষেপে মণ্ডলগুলোর সাথে জড়িত গল্পটি বলবো। সত্যি বলতে এসব গল্প জানা থাকলে আকাশে মণ্ডল মনে রাখা অনেকটা সহজ লাগে৷
পারসিয়াস বেরিয়েছেন এক দুঃসাহসিক অভিযানে, গর্গনের মথা আনতে। গর্গনরা ৩ বোন। তাদের নাম যথাক্রমে থেনো, ইউরায়েল এবং মেডুসা। তাদের সারা শরীরে ছিলো সোনালী বর্ণের আঁশ আর ছিলো পাখির মতো ডানা। তারচেয়েও ভয়ের ব্যাপার ছিলো তাদের চুল। সেগুলো চুল নয়, জীবন্ত আর বিষাক্ত সাপ। এরা সারাক্ষণ কিলবিল করতো। আর সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার, তাদের চেহারার দিকে তাকালে যেকোনো জীবন্ত প্রাণী পাথরের মূর্তি হয়ে যেতো! ৩ বোনের মধ্যে ২ বোন অমর। শুধুমাত্র মেডুসাই ছিলো মরণশীল। সজাগ অবস্থায় মেডুসাকে হত্যা করা বেশ কঠিন। হয়তো এই কারণে ঘুমন্ত অবস্থায় তার মাথা কেটে নেয় পারসিয়াস। এরপর তা ব্যাগে ভরে মাথায় টুপি আর উড়ন্ত জুতো পরে আকাশে উড়ে যান তিনি। আকাশ পথে উড়ে আসার সময় মেডুসার মাথার রক্ত পড়ে সমুদ্রের পানিতে আর সেই রক্ত থেকেই জন্ম নেয় পক্ষীরাজ বা পেগাসাস ঘোড়া।
ইথিওপিয়ার রাজা সিফিয়াস ও রানী ক্যাসিওপিয়ার মেয়ে হল অ্যান্ড্রোমিডা। রানী ক্যাসিওপিয়া অত্যন্ত সুন্দরী হওয়ায় তার গর্বের শেষ ছিলো না। তিনি সমুদ্র দেবতা নিমিয়াসের মেয়েদের চেয়েও সুন্দরী বলে গর্ব করায় নিমিয়াস রেগে যান আর সমুদ্র থেকে এক ভয়ংকর তিমি বা জলদৈত্য সিটাসকে পাঠিয়ে দেন। সে ইথিওপিয়াবাসীদের দলে দলে মারতে লাগলো। রাজা দেবতার মন্দিরে ধরনা দিয়ে জানতে পারলো তার মেয়েকে এই তিমির মুখে তুলে দিলে এ রোষের উপশম হবে। আর তাই অ্যান্ড্রোমিডাকে হাত পা বেঁধে সমুদ্রের ধারে পাথরের সাথে বেঁধে রাখা হলো। পারসিয়াস আকাশ পথে পক্ষিরাজ ঘোড়ায় চড়ে যাবার সময়ে সুন্দরী অ্যান্ড্রোমিডাকে দেখামাত্র তার প্রেমে পড়ে যান৷ আর তার সিটাস তখন অ্যান্ড্রোমিডাকে প্রায় ধরে-ধরে। চিলের মতো ছো মেরে পারসিয়াস ঝাপিয়ে পড়ে সিটাসের উপর আর তাদের লড়াই দীর্ঘক্ষণ চলতে থাকে। লড়াইয়ে পারসিয়াস বেগ পাচ্ছিলো তাই, শেষে সে সিটাসকে দেখালো মেডুসার ভয়ংকর মাথা। সাথে সাথে প্রবল পরাক্রান্ত দানব পাথর হয়ে গেলো সেইসাথে একটা দ্বিপে পরিণত হলো। আর পারসিয়াস অ্যান্ড্রোমিডাকে বন্ধনমুক্ত করে নিয়ে গেলেন রাজা সিফিয়াসের কাছে। আর এতে রাজা অনেক খুশি হলেন এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ পারসিয়াসের সাথে অ্যান্ড্রোমিডার বিয়ে দিলেন।
আকাশ পটে পারসিয়াস, অ্যান্ড্রোমিডা, পক্ষিরাজ, সিটাস, ক্যাসিওপিয়া আর সিফিয়াস – এ তারামণ্ডলগুলো বেশ নিকটে অবস্থিত।
আকাশ পটে পারসিয়াস মণ্ডল
পার্সেইড উল্কাবৃষ্টির রেডিয়ান পাওয়ার জন্য আমাদের পারসিয়াস মণ্ডলকে খুজে পেতে হবে। আর পারসিয়াসকে খোঁজার জন্য অ্যান্ড্রোমিডার এবং অ্যান্ড্রোমিডাকে খোঁজার জন্য পক্ষিরাজের সাহায্য লাগে।
এসময় পারসিয়াস মণ্ডল উদিত হয় ১০টা ৪০মিনিটের দিকে। রাত যত গভীর হয়, এটা ততই উপরে আসে। তাই আমি মধ্যরাতের হিসেবেই লিখছি।
পূর্ব আকাশের দিকে তাকালে প্রায় সমান উজ্জ্বলতার ৪টি তারা দিয়ে একটা বর্গাকার ক্ষেত্র কল্পনা করা যায়। এটা প্যাগাসাস বর্গ, সহজেই এ বর্গ চোখে পড়ে। এ বর্গের নিচের বাহুর বামের তারা অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব কোণের তারাটি হল অ্যান্ড্রোমিডার প্রথম তারা। আগে এটা প্যাগাসাস এবং অ্যান্ড্রোমিডা উভয়ের তারা হিসেবে গণ্য করা হলেও, এখন শুধু অ্যান্ড্রোমিডার। তারাটির নাম উত্তর ভাদ্রপদ (Alpherataz)। এ তারাটির নিচে একই উত্তর-পূর্ব কোণে একটা সরলরেখা টানলে সেই সরলরেখায় ৩টি উজ্জ্বল তারা পাওয়া যায়। এটা অ্যান্ড্রোমিডার শরীর। এই ৩টা তারার মধ্যে ১মটা তুলনামূলক কম উজ্জ্বল, ২য়টা সবচেয়ে বেশি এবং ৩য়টা ২য়টার চেয়ে কম কিন্তু প্রথমটার চেয়ে বেশি উজ্জ্বল। এই সরলরেখাকে উত্তর-পূর্বে আরো বাড়িয়ে দিলে বা ৩য় তারাটি থেকে উত্তর-পূর্বে একটি সরলরেখা টানলে করলে একটি উজ্জ্বল তারা পাওয়া যায়। উত্তর-পূর্বের আকাশে এটাই সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা। প্যাগাসাস, অ্যান্ড্রোমিডা এদের না বুঝলেও উত্তর-পূর্বের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা খোঁজে বুঝতে পারলেও চলবে। এটি পারসিয়াস মণ্ডলের ১ম তারা৷ এর নাম কুঠারপৃষ্ঠ (Mirfak / Algenib)। এ তারাটির উপরে বামে একটি উজ্জ্বল তারা দেখা যায় এবং সেই তারাটিরো উপরে বামে আরেকটি তারা দেখা যায় অর্থাৎ আমরা উপরে বাম দিকে একটি ছোটখাটো সরলরেখা পাই। কুঠারপৃষ্ঠকে এই সরলরেখার ১ম তারা ধরলে উপরে বামেরটি ২য় তারা, যার নাম গামা-পারসি এবং গামা-পারসির উপরে বামে বা সরলরেখার ৩য় তারাটি হল ইটা-পারসি। গামা-পারসির বামে একটু অনুজ্জ্বল একটা তারা আছে। এর নাম টাউ-পারসি। গামা-পারসি, টাউ-পারসি এবং ইটা পারসি এ ৩টা তারা দিয়ে একটা ছোট ত্রিভুজ ভাবা যায় এবং এটাই হলো পারসিয়াসের মাথা। যাহোক, এই ইটা-পারসির একটু বাম দিকেই আমাদের পার্সেইড উল্কাবৃষ্টির রেডিয়ান্ট অবস্থিত।
পারসিয়াসকে পাওয়ার আরেকটি সহজ উপায় আছে। আসলে রেডিয়ান্টকে পাওয়ার জন্য আমার মতে, এটাই সবচেয়ে সহজ। উত্তর-পূর্বে তাকালে প্রায় সমান উজ্জ্বলের ৫টি তারা সহজেই নজরে পড়ে। এই ৫টি তারা দিয়ে অতি সহজেই ইংরেজিতে W কল্পনা করা যায়। কাত হয়ে থাকা W। এটা ক্যাসিওপিয়া মণ্ডল। এই W সবচেয়ে নিচের তারাটি অর্থাৎ ৫ম তারাটির নাম কশ্যপ (Segin)। এই তারাটির নিচে ডান দিকে একটা সরলরেখা টনলেও ইটা-পারাসি কে পাওয়া যায়। এর একটু বামেই আমাদের রেডিয়ান্ট।
এবার একটু অন্য ব্যাপারে আসি। এই রেডিয়েন্টটা হলো সবচেয়ে একটিভ। কিন্তু এটা ছাড়াও কিছু রেডিয়েন্ট আছে। এটার পরের অবস্থানেই আছে চাই এবং গামা পারসির রেডিয়ান্ট। এর নিচে আছে ফালফা এবং বিটা পারসির রেডিয়ান্ট, তবে এ ২টা খুবই স্বল্পভাবে একটিভ, নগন্য। গামা-পারসিকে চিনিয়ে দিলাম। চাই-পারসি ইটা-পারসির হালকা উপরে এবং ডানে। এটা খালি চোখে দেখা যায় না। এটা একটা দ্বৈত তারাগুচ্ছ (ডাবল ক্লাস্টার), NGC 884 নামে পরিচিত। এ দুয়ের কাছাকাছিও রেডিয়েন্ট আছে তবে এরা ইটা-পারসির রেডিয়ান্ট থেকে কম একটিভ। এদের সেকেন্ডারি রেডিয়ান্ট বলা হয়। আমি আগে বলেছিলাম রেডিয়ান্ট এর দিকে সরাসরি তাকানো উচিত নয়। এই উল্কাবৃষ্টির জন্য আমার সাজেশন থাকবে আপনি পারসিয়াসের মাথার দিকে অর্থাৎ ঐ ত্রিভুজের দিকে চওড়া ভাবে তাকাবেন। আর মাঝে মাঝে এই ৩টা তারার আশেপাশে এবং মাঝেমধ্যে আলফা-পারসি অর্থাৎ কুঠারপৃষ্ঠ (Mirfak / Algenib) তারার আশেপাশেও তাকাতে পারেন৷ তবে মেইন এবং সবচেয়ে এক্টিভ রেডিয়ান্ট কিন্তু ইটা-পারসির বামে।
এবার চাঁদের জন্য ঝামেলা হবে। তবে আমার একটা সাজেশন আছে। পারসিয়াস উদিত হবে ১০টা ৪০ মিনিট এ৷ চাঁদ তখন থাকবে না। চাঁদ উঠবে ১১টা ১৮মিনিটে। পারসিয়াসের সাথে তার রেডিয়ান্ট ও উঠবে। তবে ১০টার দিকে তার রাডিয়ান্ট দিগন্ত বরাবর থাকবে। তার মানে ১০টা থেকেই উল্কাবৃষ্টির দেখা মিলবে। সেই হিসেবে ১০টা থেকে ১১টা ১৮ হলো বেস্ট একটা টাইম চাঁদের সমস্যা থেকে মুক্তির। তবে তখন উল্কা কম থাকলেও চাঁদের আলো না থাকায় উজ্জ্বলতার সমস্যাটা হবে না। তখন আকাশে, প্যাগাসাস, অ্যান্ড্রোমিডা আর ক্যাসিওপিয়া থাকবে৷ আপনি তখন সরাসরি উত্তর-পূর্বে তাকাতে পারেন কিংবা আমার নির্দেশনা দ্বারা অনুমান করে রেডিয়ান্ট এর বেশ নকটে পৌঁছাতে পারেন৷ কিন্তু তখন, পারসিয়াস কে পাবেন না, সে মাত্র উঠছে। তাবে চাঁদ উঠার পরে দেখতে কষ্ট হবে।
লেখাটি শেষের আগে একটা কথা বলা বাকি ছিলো। আমার এ লেখাটা শুরু হয়েছে “জন ডেনভারের” এক গানের লিরিক্স এর অংশ দিয়ে। উনাকে অনেকেই উনার বিখ্যাত গান “Take Me Home, Country Road” এর মাধ্যমে চিনেন। গানটা আমি প্রথম শুনি “Whisper of the Heart“এনিমেতে। এটা আবার, Kingsman 2 মুভিতেও ছিলো। যাহোক, ১৯৭২ সালে জন ডেনভার পার্সেইড উল্কাবৃষ্টি দেখেছিলেন। এতে উনি এতো মুগ্ধ হয়েছেন যে, এই উল্কাবৃষ্টিকে কেন্দ্র করে তিনি “Rocky Mountain High” নামের গানটি লেখেন। আমার লেখা এই গানের অংশ দিয়েই শুরু হয়েছে। এ লেখাটির ইতি টানতে চাই। “Rocky Mountain High” গানটির লিরিক্স দিয়ে।
He was born in the summer of his 27th year
Coming home to a place he’d never been before
He left yesterday behind him, you might say he was born again
You might say he found a key for every door
When he first came to the mountains his life was far away
On the road and hanging by a song
But the string’s already broken and he doesn’t really care …
……………
I’ve seen it rainin’ fire in the sky
Friends around the campfire and everybody’s high
Rocky mountain high…
তথ্যসূত্রঃ
১. তারা পরিচিতি – আবদুল জব্বার
২. আকাশ পট – ঐ
৩. পুরাণ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান – শাহনাজ পান্না
৪. টেলিস্কোপ কী বলে – পাভেল ক্লুশানৎসেভ
৫. Guidebook to the Constellations – Phil Simpson
৬. Meteor Showers An Annotated Catalog – G.W. Kronk
৭. Falling Stars – Mike D. Reynolds
৮. Meteors & How to Observe them – R. Lunsford
৯. David Levey’s Guide to Observing Meteor Showers – D. Levey
১০. Cosmic Debris – Jonathan Powell
মো. সাজেদুল হক। ছদ্মনাম, “হৃদয় হক”। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। প্রধানত জ্যোতির্বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখালিখি তার পছন্দের।