মার্কিন বিজ্ঞানীরা এমন একটি ক্যান্সার ভ্যাকসিন তৈরির পথে অনেক দূর এগিয়েছেন যা প্রায় সব ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। এই ভ্যাকসিনটি মূলত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেবে, যাতে সেটি নিজেই বিভিন্ন প্রকার টিউমারের ক্যান্সার কোষকে চিনে নিয়ে ধ্বংস করে ফেলতে পারে।

এই গবেষণায় COVID-19 ভ্যাকসিনের মতই আধুনিক mRNA প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় এবং UCLA-সহ বেশ কিছু প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা একযোগে কাজ করছেন। এই পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনগুলো শরীরে টিউমারের কিছু বিশেষ উপাদান (নিওঅ্যান্টিজেন) প্রবেশ করিয়ে দেয়। এর ফলে, শরীরের ভেতরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং এমন যোদ্ধা কোষ (টি-সেল) তৈরি করে, যা বিশেষভাবে ক্যান্সার কোষগুলোকে খুঁজে বের করে আক্রমণ করতে সক্ষম।

সাম্প্রতিক পশুদের উপর চালানো পরীক্ষায় এর দারুণ ফল পাওয়া গেছে। এই ভ্যাকসিনগুলো কেবল টিউমারের বৃদ্ধিই থামিয়ে দেয়নি, বরং এমন টিউমারকেও সারিয়ে তুলেছে যা সাধারণ চিকিৎসায় সারছিল না। একটি গবেষণায় দেখা যায়, ভ্যাকসিনটি ইঁদুরের শরীরের টিউমার পুরোপুরি নির্মূল করেছে এবং তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই বাড়িয়ে দিয়েছে যে ভবিষ্যতে ক্যান্সার ফিরে আসার সম্ভাবনাও কমে গেছে। মানুষের ওপর চালানো প্রাথমিক পরীক্ষাতেও আশার আলো দেখা গেছে। বিশেষ করে অগ্ন্যাশয় ও কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে তৈরি একটি ভ্যাকসিন রোগীদের আয়ু বাড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছে।

তবে এই অগ্রগতি বেশ আশাব্যঞ্জক হলেও, বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যে এটিকে এখনই ‘সার্বজনীন’ ভ্যাকসিন বলা যাচ্ছে না। কারণ বর্তমান সাফল্যগুলোর বেশিরভাগই পশুদের ওপর এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মানুষের ওপর চালানো ছোট আকারের পরীক্ষা থেকে এসেছে। এর দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা এবং সঠিক ডোজ নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। সাধারণ মানুষের জন্য এটি বাজারে আসার আগে আরও বড় আকারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।

এতকিছুর পরেও, ক্যান্সার চিকিৎসার জগতে এটি একটি বিশাল পদক্ষেপ। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে, আগামী এক দশকের মধ্যেই হয়তো এমন একটি কার্যকর ক্যান্সার ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হবে, যা শুধু চিকিৎসাই নয়, ক্যান্সার প্রতিরোধেও যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।