Coma - রাশিয়ান সাইফাই মুভি রিভিউ
-
কাহিনী
-
অভিনয়
-
মিউজিক
-
সিনেমেটগ্রাফী
Coma/কোমা - অসাধারনের থেকেও একটু বেশি কিছু
একজন তরুন স্থপতি গাড়ি দূর্ঘটনায় কোমায় চলে যান। কোমা থেকে জেগে উঠে তিনি নিজেকে দেখতে পান অদ্ভুত একটা পৃথিবীতে। সেখানে বিভিন্ন মানুষের স্মৃতি জমে আছে। এখানকার বিজ্ঞানের সূত্র তার ফেলে আসা জগতের সাথে মেলে না। কোমা’র এই পৃথিবী থেকে তাকে ফিরে যেতে হবে নিজের চেনা জগতে। অচেনা এ জগতে তাকে নামতে হয় জীবন বাঁচানোর এক অসম লড়াইয়ে।
মুক্তিঃ জানুয়ারী ৩০, ২০২০
ভাষাঃ রাশিয়ান
ডিরেক্টরঃ Nikita Argunov
গল্পঃ Nikita Argunov Aleksey Gravitskiy Timofei Dekin
একটা মুভি দেখলাম, নাম কোমা। দেখার পরই মনে হল সাইফাই ভক্ত হিসেবে এই মুভি আমি আরো আগে কেন দেখলাম না! কতশত ভালো গল্প ভাষার কারনে রয়ে যাচ্ছে অগোচরে। কিছুটা আফসোসও হয়েছিল।
আমরা হলিউডি সায়েন্স ফিকশনের ভক্তরা অনেকেই রাশিয়ান, চাইনিজ আর কোরিয়ান সাইফাই মুভিগুলো মিস করে যাই।
কোমার গল্প শুরু হয় একজন স্থপতির গাড়ি দূর্ঘটনা দিয়ে। এরপর জেগে উঠে নিজেকে সে আবিষ্কার করে অদ্ভু্ত এক পৃথিবীতে। শুরু থেকেই তাকে তাড়া করে বেড়ায় ভয়ঙ্কর দেখতে কালো ধোয়ার মত একটা প্রানী সেখানে থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে তিনজন মানুষ। একজন আবার এই আজব প্রানীর সাথে মারামারি করতে গিয়ে নিজের জীবন উতসর্গ করে।
এই পর্যন্ত এসেও আপনি মুভিটা আসলে কোন জেনারের – সাইফাই নাকি ফ্যান্টাসি সেটা ধরতে পারবেন না। আপনাকে আরো গভীরে যেতে হবে গল্পের।
কোমায় থাকা সব মানুষের স্মৃতি অদ্ভুত ভাবে একই সুতোয় গাঁথা। তাদের জন্য আলাদা একটা পৃথিবী আছে সেখানে তারা কোমা থেকে আবার বাস্তব জীবনে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। তাদের জন্য পৃথিবীর নিয়ম-কানুন খাটে না। আছে ফিজিক্সের ভিন্ন ধরনের সূত্র আর স্পেস টাইম বেন্ডিং এর মত ঘটনা।
প্রথমে এইটুকু গেলেই আপনার মনে হবে গাঁজাখুরি একটা গল্প। এত এত মানুষ কোমায় যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তারা সবাই একসাথে কিভাবে হয়, একই জায়গায় কিভাবে জেগে ওঠে? যুক্তি কি বলে?
মুভির আরেকটু ভেতরে গেলেই আপনি বুঝতে পারবেন এই কোমা আসলে ইনডিউসড করা। এদের সবাইকে একজন মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে নতুন এক ধর্মের লোভ দেখিয়ে কোমায় নিয়ে এসেছে।
এখন আপনার কাছে ঘটনা পরিষ্কার। এটা অনেকটা ম্যাট্রিক্স আর ইনসেপশন মুভির মত। যেখানে ঘুমিয়ে থাকা মানুষেরা আলাদা একটা জগতে বিচরন করে, পেয়ে যায় অসাধারন সব ক্ষমতা। বাস্তবের পৃথিবীতে যারা কোনভাবে অক্ষম তারা এখানে পেয়ে যায় অসাধরন সব ক্ষমতা।
আমাদের গল্পের নায়ক ভিক্টর একজন আর্কিটেক্ট। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এই ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে একটা নিরাপদ দ্বীপ বানানোর জন্য। তার ফিউচারিস্টিক নকশা সবাই অসম্ভব বলে বাস্তবে উল্লেখ করলেও সেটা কোমার এই পৃথিবীতে সম্ভব। নিজের চেনা পৃথিবীতে ফিরে আসার অদম্য ইচ্ছা থাকলেও সেটা অসম্ভব বলেই মনে হয়েছে একটা সময় গিয়ে।
আমি গল্প উপস্থাপনার নতুনত্বে মুগ্ধ হয়েছি। CGI এর যুগে হলিউডি দাপুটে একশন সাইফাই থ্রিলারের ভিড়ে এরকম গল্প বলা সাই-ফাই মুভির সংখ্যা নগন্য।
কোমার পৃথিবী দেখতে অনেকটা গেইমিং সেটের মত লেগেছে আমার কাছে, এটা বেশ “জোশ” একটা ভাব নিয়ে এসেছে। এখানকার কিছুই ফিজিক্সের সাধারন নিয়মে চলে না। সময় অনেক প্রলম্বিত এখানে, আছে স্পেইস বেন্ডিং আর ওয়ার্মহোলের মত ব্যবস্থা। তবে কোন কিছুরই অতি ব্যবহার দৃষ্টিকটু লাগেনি।
একশন দৃশ্য কিছুটা ম্যাডম্যাক্সের মত আর রাশিয়ান মুভি হওয়া স্বত্বেও কোমা পৃথিবীর রাস্তা-ঘাট আর বিল্ডিং গুলো লেগেছে আমেরিকান শহরের মত।
যদি চুলচেরা বিশ্লেষন বাদ দেই, তবে এককথায় অসাধারন একোটা প্লট। সাইফাই একশন মুভি দেখতে দেখতে বোর হয়ে গেলে এরকম গল্পের মুভি একটা শীতল বাতাসের ঝাপটার মত লাগে মস্তিষ্কে।