দীর্ঘ জীবন সংগ্রাম

আশালতা


ছোটবেলায় জন্মে ছিলাম এই পরিবারে,
মুখটা কালো হয়েছিল সবার আমি মেয়ে বলে।
জন্মদাতা বাবাও বাদ পড়েনি,
মেয়ে হয়ে করেছিলাম; জীবনের প্রথম ভুলটি।

ভাঙ্গা আয়না যেন আর জোড়া লাগে না,
আমায় দেখেও কারো মুখে হাসি ফুটত না।
তারপরেও, শৈশবটা ভালোই কেটেছিল,
শৈশবে বাবা আমার বন্ধুটি ছিল।

কৈশোরে পা রাখার আগেই কালো ঝড় এলো,
সেই ঝড়েই জীবনটা পুরো পাল্টে গেল।
চেনা মানুষ গুলোও আমার অচেনা রূপ নিল।

বয়স বাড়ার সাথে যখন সবকিছু উপলব্ধি করছি,
চারপাশ দেখে তখন অনেক অবাক হয়েছি।

ঝগড়া-বিবাদ দেখেছিলাম জন্মের পর থেকে,
জীবন বুঝার আগেই বুঝতে হয়েছে সংগ্রামটাকে।
কারণ, আমি ছিলাম “মেয়ে”।

অজানা এক সংগ্রামে নিজেকে জড়িয়েছি,
মেয়ে বলেই কি সংগ্রাম? এর জবাব কি?

সুখ-দুঃখ,মায়া-মোহ সব বাদ দিয়ে,
বেঁচে যাই সারাজীবন অন্যের দাস হয়ে।
নিজের একটি পরিচয় তো নিজে থাকে না,
নিজের মত করে বাঁচার অধিকারও থাকে না।

এটাই কী স্বাধীনতা? যা সমাজ দিয়েছে?
সব কিছুই কেড়ে নিয়ে,কী সম্মান দিয়েছে?

সমাজ আমার খুব ভালো ধর্মের কথা মানে,
ধর্মের দোহাই দিয়ে তারা,ঘর বন্দি করে।

যৌতুকের জন্য যখন নারী হত্যা হয়,
সমাজের ধর্ম তখন কী কথা কয়?
আমাদের বেলাই ধর্ম কী বিধান তুলে ধরে?
আর ছেলেদের বেলায় ধর্ম বিধান,
কোথায় লুকোনো থাকে?

তবুও সব দেখে যাই আমি চুপটি করে,
কারণ, আমি হলাম “মেয়ে”।

কম বয়সে জীবনটাকে করছি উপলব্ধি কঠিন ভাবে।
সমাজ আমার এতই সুশীল সবকিছুই বোঝে,
সবশেষে আঙুলটা আমার দিকেই তোলে।

অন্যায় দেখেও প্রতিবাদের ধার তো ধারি না,
তারপরেও মিথ্যা অপবাদ পিছু ছাড়ে না।
নিয়তি কেন এমন তা তো জানি না!
অবুঝ মনের প্রশ্নের উত্তর আজও দিতে পারিনা।

জীবন সংগ্রাম এভাবেই চালিয়ে যেতে হয়,
যে সংগ্রাম জয়ের মাঝে শুধু শেষ নয়।
সংগ্রাম শুরু করেছিলাম; প্রথম নয়ন খুলে জেগে,
তাই শেষটাও করব আমি; ঘুমপাড়ানির দেশে গিয়ে।

কারণ,আমার পরিচয় আমি একটি,
“মেয়ে”।


আশালতা
২৪.০৭.২০২০

মতামত দিনঃ