ফারিণ মেহেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯৯ সালে। সেভাবে হিসাব করলে এখনও বয়সের কোটা কেবল ২৩ থেকে ২৪ এর ঘরেই। এর মধ্যেই এক বছরে ৮০টি নাটক করার রেকর্ড করেছেন ফারিণ। অপূর্ব, নিশো থেকে শুরু করে চঞ্চল চৌধুরী; দেশের জনপ্রিয় সব তারকার সঙ্গে ইতোমধ্যে একের অধিক ভালো সব কাজ করে দর্শকের প্রিয় অভিনেত্রীর তালিকায় শীর্ষে আছেন তিনি। তবে গায়িকা হতে চাওয়া ফারিণ কীভাবে নায়িকা হলেন সেই গল্প জেনে নেয়া যাক-
বাবা সরকারি চাকরি করতেন বলে দেশের অনেক জেলায় থাকা হয়েছে এ অভিনেত্রীর। তাই ১৪ টার ওপরে স্কুল পরিবর্তন করে এক সময়ে বেশ কিছুদিন কক্সবাজারও থাকা হয়েছে ফারিণের। বরাবরই বেশ ইন্ট্রোভার্ট ছিলেন ফারিণ। খুব বেশি বন্ধু ছিল না তার। তবে কখনও কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলে সেখান থেকে নিজেকে বের করতে কষ্ট হতো তার। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম, তারপর যশোর থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় ঢাকায় আসেন তিনি। বেশ কড়াকড়ির মধ্যে, কঠোর নিয়ম কানুনেই বড় হয়েছেন ফারিণ। একই সঙ্গে নাচ, গান কবিতা আবৃত্তি, বিভিন্ন রকমের এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসে জড়িত ছিলেন তিনি। এতকিছুর মধ্যে গানটা সিরিয়াসলি শিখেছিলেন। ক্লাস থ্রি থেকে নজরুল সংগীত আর উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নিয়েছেন। সবশেষ সংগীতে অনার্স করেছেন এবং এত বছরের সংগীতের প্রতি তার ভালোবাসা থেকেই, অভিনয় থেকে গান গাইতেই বেশি ভালোবাসেন ফারিণ। এমনকি নিজের গানের অ্যালবামও বের করার ইচ্ছে ছিল তার।
কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর গানের সঙ্গে আর পথচলা হয় না ফারিণের বরং তখন ছোটখাটো বিজ্ঞাপনের কাজ করতে শুরু করেন তিনি। মূলত ২০১৬ সালে গ্রামীণফোনের বিলবোর্ডের মাধ্যমে মিডিয়ায় আসা তার। মিডিয়ার প্রথম কাজে তার পারিশ্রমিক ছিল ১০ হাজার টাকা। এরপর বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি নাটকে কাজ করার জন্য ফারিণকে স্পৃহা দেয় তার মা।
শাফায়েত মন্সুর রানার ‘আমরা ফিরব কবে’ নাটকে ২০১৭ সালে প্রথমবার ছোট পর্দায় অভিষেক হয় ফারিণের। তবে তার ভাষ্যমতে প্রথমবার নাটকে কাজ করার অভিজ্ঞতা তেমন ভালো ছিল না। তাই সেই বছর আর অন্য কোনো কাজে দেখা যায়নি তাকে।
এরপর আবার ২০১৮ সালে একটা দুইটা কাজ করে লাইম লাইটে আসনে ফারিণ। ২০১৯ সালে নাটক ‘এক্স বয়ফ্রেন্ড’ তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট নাটক তাসনিয়া ফারিণের। ২০২১ সালের কথা। ছোটপর্দায়, গালের এক কোনে টোল পড়া হাসি দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি মাতিয়ে রেখেছেন ফারিণ। মহামারির সেই সময়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চরকি আসে। যেখানে মুক্তি পায় ফারিণের প্রথম ওয়েব ফিল্ম নেটওয়ার্কের বাইরে।
একই বছর ফারিণকে দেখা যায় লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান ওয়েব সিরিজে। যেটা কিনা তার ক্যারিয়ারের আরেকটা টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। এ সিরিজের সাবলীলভাবে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর সম্মাননা লাভ করেন তিনি। এরপর ২০২২ এ আসে সিন্ডিকেট এবং কারাগার। দুটো ওয়েব সিরিজের গল্প, কাস্ট, অভিনয় নিয়ে এত আলোচনা হয়েছে যে এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। নিঃসন্দেহে তার ক্যারিয়ারকে পিকে নিয়ে গেছে এ দুর্দান্ত দুটি কাজ।
এদিকে সামনেই বড় পর্দায় দেখা যাবে প্রিয় অভিনেত্রীকে। কেননা পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় নির্মাতা অতনু ঘোষের ‘আরও এক পৃথিবী’ সিনেমায় কাস্ট করা হয়েছে ফারিণকে।
জানা গেছে, তার লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যানে অভিনয় দেখেই পরিচালক অতনু তার পরবর্তী সিনেমার নায়িকা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফারিণকে। এ ছাড়া সবশেষ চরকিতে ‘নিঃশ্বাস’ ওয়েব ফিল্মে অভিনয় করেছেন ফারিণ। রায়হান রাফির ওয়েব ফিল্মটির ট্রেলার ইতোমধ্যে মুক্তি পেয়েছে।
এত অল্প সময়ে সিনেমার নায়িকা বনে যাওয়া ফারিণের ব্যক্তিজীবন নিয়ে খুব বেশি কিছু জানার অবকাশ নেই। কেননা নিজের পার্সোনাল এবং প্রফেশনাল লাইফকে আলাদা রাখতে পছন্দ করেন এ অভিনেত্রী। পরিবার বন্ধুবান্ধব কাউকে নিয়েই কোথাও ছবি পোস্ট করেন না তিনি। এমনকি ফেসবুক পেজ ছাড়া আলাদা কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্টও ব্যবহার করেন না ফারিণ। আর ইনস্টাগ্রাম থাকলেও সেখানে কেবল ঘুরতে যাওয়ার, খেতে যাওয়ার ছবি পোস্ট করেন ফারিণ। ছোটবেলা থেকেই চাপা স্বভাবের ছিলেন তাই নিজের ব্যক্তিজীবনকে সম্পূর্ণ আড়ালেই রেখেছেন তিনি। হাসি আর কাজের ধরনের জন্য ফারিণকে বাংলাদেশের কুইন খ্যাত অভিনেত্রীও বলছেন অনেকে। এমনকি ছোট-বড় পর্দায় নির্মাতাদের অন্যতম চাহিদাও এখন তাসনিয়া ফারিণ।