ছদ্মবেশ - সাদাত হোসাইন এর থ্রিলার উপন্যাস
-
প্রচ্ছদ
-
মুদ্রন
-
গল্প
-
মূল্য
গল্প সংক্ষেপঃ -
লতিফুর রহমান বাথরুমের দরজাটা খুললেন, তারপর চিৎকার করতে গিয়েও আচমকা থমকে দাঁড়ালেন, তাঁর হাত-পা কাঁপছে, তিনি টলছেন, মনে হচ্ছে তার চারপাশের জগৎটা চরকির মতো পাক খেয়ে ঘুরছে, পেটের ভেতর গুলিয়ে বমি হয়ে উঠে আসছে নাড়ি-ভূঁড়ি, তিনি তীব্র আত্ঙ্ক নিয়ে আরো একবার চোখ মেলে তাকালেন।
বাথরুমের মেঝেতে কাত হয়ে পড়ে আছে একটা লাশ, লাশটার গলা থেকে মাথাটা প্রায় ছুটে এসে বিভৎসভাবে ঝুলে আছে বুকের ওপর, পচে যাওয়া লাশটার শরীর বেয়ে ভনভন করে উড়ছে মাছি…
মোটামুটিভাবে এখান থেকেই গল্পের সূচনা হয়। একটা খুনের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর রেজাউল হক কিভাবে দেখেছেন পরিস্থিতি, আর কিভাবেই বা পৌছুলেন খুনি পর্যন্ত সেটাই এই থ্রিলারের পাঠক জানতে পারবে।
বইঃ ছদ্মবেশ
লেখকঃ সাদাত হোসাইন
প্রকাশকালঃ ২০১৯
প্রকাশনীঃ অন্যধারা
প্রচ্ছদঃ সনদ কুমার বিশ্বাস
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৪৪
মূল্যঃ ২৫৫ টাকা
থ্রিলার বলতে আসলে যা বোঝায়, বা আপনারা যারা থ্রিলারের রেগুলারের পাঠক/পাঠিকা, তাদের কাছে এটা শুরুর দিকে থ্রিলার নাও লাগতে পারে। সাদাত হোসাইনের গল্প বলার আলাদা একটা ঢং আছে। অনেকটা জীবনমুখী আর পারিবারিক আদলে তিনি গল্প বলেন। তার গল্পে ঘটনার সুক্ষতার থেকে বেশি থাকে মানব-মানবীর সম্পর্কের গল্প।
থ্রিলারেও তাই হয়েছে। শুরু হয়েছে লতিফুর রহমানের বাড়ি থেকে। তার বাড়ি বানানোর গল্প, ভাড়াটে যোগাড়ের গল্প, ছেলের গল্প। আপাত দৃষ্টিতে ঘটনা বর্ননা খাপছাড়া মনে হলেও একদম শেষে গিয়ে সব সুতো যখন একই নাটাই দিয়ে টানা হয় তখন পাঠক খুঁজে পান যোগসূত্র।
এটা সাদাত হোসাইনের প্রথম গোয়েন্দা উপন্যাস। তিনি যে অন্যরকম গল্পও লিখতে পারেন এই বই তার প্রমান। থ্রিলার হিসেবে হয়ত খুব উঁচু মানের নয় কিন্তু তার যে সহজাত ঘটনা বর্ননার অভ্যাস তাতে পাঠক হিসেবে আমি আটকে গেছি।
ইদানিং খুব কম বই-ই আমি এক বসায় পড়ি। সময় কম পাই, আগেকার সেই পাঠকের মৃত্যু হয়েছে। “ছদ্মবেশ” কিন্তু এক বসায় পড়েছি। পুলিশের চরিত্রের রেজাউল হককেও ভালো লেগেছে। কিন্তু লেখকের কারনেই এই চরিত্রের যতটা অনুসন্ধিৎসু হবার কথা তা হতে পারেনি।
এক সময় মনে হয়েছে হাতড়ে হাতড়ে তিনি খুনের ঘটনার তদন্তে নেমেছেন। কোন ফরেনসিক রিপোর্ট নেই, অ্যালিবাই যাচাই করা নেই, যাদের কে মূল আসামী বলে প্রতিয়মান হয় তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান নেই। যেন দৈব বলে রেজা একের পর এক ক্লু পেয়ে গেছেন। পাতায় পাতায় রোমাঞ্চের সেই মজাটা তাই এই উপন্যাসে নেই।
তবে ঐ যে বললাম, সাদাত হোসাইনের উপন্যাস মানেই মানব-মানবীর সম্পর্কের গল্প এখানেও তাই। সেটা পড়তে পড়তেই আপনার সময় কেটে যাবে। বইয়ের পরিসরও আগের থেকে ছোট হয়েছে। তার অন্যান্য উপন্যাস যেখানে গল্প দীর্ঘায়িত হয়েছে অহেতুক বর্ননায় সেটা ” ছদ্মবেশে” কিছু কম।
একটা জিনিস কিন্তু মানতে হয়, নামকরন আর প্রচ্ছদ দুটোই বেশ অর্থ বহন করে। উপন্যাসের শেষ পরতে এসে পাঠকের সামনে খুলে পড়ে সমাজের নানা রকম মানুষের ছদ্মবেশ।
খুব তাড়াহুড়ায় রহস্যের যবনিকা টানা হয়েছে। যেভাবে ধীরলয়ে শুরু হয়েছে সেভাবে শেষ হলে আমার কাছে ভালো লাগত।