Origin / অরিজিন - ড্যান ব্রাউনের থ্রিলার উপন্যাস
-
প্রচ্ছদ
-
মুদ্রণ
-
গল্প
অরিজিন - অনেক কঠিন প্রশ্নের সহজ উত্তর দিয়ে গেছে আর ভাবতে বাধ্য করেছে নতুন ভাবে...
বিলিওনিয়ার, কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট, ফিলান্থ্রোপিস্ট এডমন্ড ক্রিশ তার যুগান্তরী আবিষ্কার প্রকাশের ঘোষনা দিয়েছেন ঘটা করে। স্পেনের বিলবাওতে গুগেনহাইম মিউজায়ামে এক অনুষ্ঠান করে তিনি জানাবেন এতদিন ধরে সবার খুঁজে বেড়ানো দুটি প্রশ্নের উত্তর, আমরা কোথা থেকে এসেছি আর আমাদের ভবিষ্যত কি হতে যাচ্ছে?।
কিন্তু মঞ্চেই খুন হয়ে যান এডমন্ড ক্রিশ। প্রফেসর ল্যাংডনের উপর গুরুদায়িত্ব পড়ে সেই ধর্ম আর বিজ্ঞানকে নাড়িয়ে দেওয়া সত্য খুঁজে বের করে প্রকাশ করার। কিন্তু পিছু নেয় পুলিশ আর আততায়ী।
প্রকাশকালঃ ৩রা অক্টোবর, ২০১৭
ভাষাঃ ইংরেজী
ধরনঃ থ্রিলার, সায়েন্স ফিকশন, এডভেঞ্চার
প্রকাশকঃ Doubleday, Arnoldo Mondadori Editore
সারা জীবনে আপনি এমন অনেক বই পড়বেন যেগুলোর কথা স্পষ্ট করে বাকি জীবন আপনার মনে থাকবে। বইয়ের নাম, লেখকের নাম কবে পড়েছেন – ইত্যকার নানা বিষয় নিউরনে গেঁথে যাবে আজীবনের মত। ড্যান ব্রাউনের “Origin” – এই থ্রিলারটিও সেরকম।
ড্যান ব্রাউনের সাথে আমার পরিচিয় বাংলায় অনুবাদকৃত তার বই “দ্যা ভিঞ্ছি কোড” এর মাধ্যমে। এর পর আর ফিরে তাকাইনি, যখনই তার কোন বই পেয়েছি গ্রোগ্রাসে গিলেছি। তবে বাংলা অনুবাদ আর পড়িনি। মূল ভাব বুঝতে তার ইংরেজী বই কিনি আমি। অরিজিনাল না হলেও নীলখেত প্রিন্টেই ভরসা।
ছোটবেলায় আমার একজন প্রিয় সাই-ফাই লেখক ছিলেন জুল ভার্ন। তার প্রতিটা বই পড়ে শেষ করার পর খুব আফসোস হয়েছিল এই লেখকের আর কোন গল্প উপন্যাস নেই কেন এটা ভেবে! ড্যান ব্রাউনের উপন্যাসের সংখ্যাও মাঝে মাঝে আমাকে এরকম মন খারাপ করিয়ে দেয়। জুল ভার্ন যেমন আমার মনে থাকবে আমৃত্যু, ড্যান ব্রাউনকেও মনে থাকেবে একই রকমভাবে।
অরিজিন বা Origin – একটা থ্রিলার উপন্যাস। গতানুগতিক থ্রিলার নয়। অনেক সূক্ষ্মভাবে লেখক তার একটা আইডিয়ার কথা বলতে চেয়েছেন। এর জন্য সাহায্য নিয়েছেন বিজ্ঞান, ধর্ম আর জনপ্রিয় কিছু টুরিস্ট স্পটের।
প্রথম ১০০ পেইজে মূল গল্প শুরুই হয়না। কেমন যেন একটা উড়াল্পংখী হই হই ভাবে ব্রাউন বর্ননা করে গেছেন ঘটনার পটভূমি। সেইসাথে পাঠকদের নিয়ে গেছেন স্পেনের ইতিহাসের কাছাকাছি। এর মনেস্ট্রি, মিউজিয়াম, চার্চ আর শিল্পের একটা স্বাদ বিস্তারিতভাবে পেয়ে যাবেন প্রথম থেকেই।
রবার্ট ল্যাংডন সিরিজের এটা পঞ্চম বই। রবার্ট ল্যাংডন হার্ভার্ড আইকোনলজির প্রফেসর, এডমন্ড ক্রিশের আমন্ত্রনে স্পেইনের বিলবাওতে অবস্থিত গুগেনহাইম মিউজিয়ামে (Guggenheim Museum) যান একটা প্রোগ্রামে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে। ঘটনার সূত্রপাত বলা চলে সেখানেই শুরু হয়।
রবার্ট ক্রিশ একজন টেক বিলিওনার, কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট এবং ফিউচারিস্ট। তিনি বলে বেড়াচ্ছেন এমন একটা কিছু আবিষ্কার করতে পেরেছেন তিনি যেটা গোটা মানবজাতির ধর্মীয় বিশ্বাস আর বিজ্ঞানের ভিতকে শুধু নাড়িয়েই দেবে না, বরঞ্চ বদলে দেবে। তাই তিনি যত বেশি সংখ্যক লোকের কাছে তার এই বার্তা পৌছে দিতে পারবেন তত বেশি লাভ। তার গুগেনহাইমের এই প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য সেটাই।
অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানের মূল প্রশ্নের একটা এরকম, “মানুষ কোথা থেকে এসেছে? আর কোথায় আমরা যাচ্ছি?” – মানে মানুষের ভবিষ্যত কি? রবার্ট ক্রিশ কি তবে এই দুই প্রশ্নের উত্তর দিতে চলেছেন?
ক্রিশের এই ঘোষনায় হুলুস্তুল পড়ে যায় সব মহলে। ধর্মীয় নেতারা নড়েচড়ে বসেন। ক্রিশকে তারা আগে থেকেই প্রতিপক্ষ হিসেবে জানেন। এবার বোধহয় আরেকটা নৈতিক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই বিলিওনিয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রবার্ট ক্রিশ তার বক্তব্য রাখার আগেই খুন হয়ে যান মধ্য স্টেজেই। উত্তেজনা আরো বাড়ে তাকে নিয়ে। মানুষের আগ্রহের তুঙ্গে পৌঁছে যায় তার অপ্রকাশিত আবিষ্কারের কথা।
নৈতিকভাবে এর সাথে জড়িয়ে যান প্রফেসর রবার্ট ল্যাংডন আর স্পেনের ভবিষ্যত রানী এম্ব্রা ব্রাইডাল। তাদের পিছু লাগে আততায়ী আর পুলিশ। ক্রিশের যে আবিষ্কার বদলে দেবে ধর্ম বিশ্বাসের মূল তা জানার জন্য পাঠকের আগ্রহও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।
বইয়ের মাঝামাঝি এসে অনেকেরই মনে হবে এডমন্ড ক্রিশ আসলে ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন। সৃষ্টি রহস্যের মূল উতঘাটন করে ক্রিয়েশনিজম এর আইডিয়াটাকে লোপাট করাই তার মূল লক্ষ্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গিয়ে সেটা আর হয় না। বরঞ্চ এমন একটা থিওরি তার বক্তব্যে পাওয়া যায় যেটা অনেকটা সাধারনভাবেই আপনি গ্রহন করতে বাধ্য। মানবজাতির উৎপত্তি আর বিকাশের এক অপুর্ব সমন্বয় দেখতে পাবেন বইয়ের শেষে গিয়ে। কিভাবে আমরা বিবর্তিত হচ্ছি আর মহাবিশ্বের উদ্দেশ্যই কি ছিল সেটার একটা আইডিয়া দেয়া হয়েছে।
লেখক নিজের চিন্তাধারাই তার লেখার চরিত্রের মাঝে ফুটিয়ে তোলেন। মাঝা মাঝে সেই সাথে জোড়া লেগে যায় বাস্তব কোন ঘটনা বা মানুষের জীবন। অরিজিন বইতে যে এডমন্ড ক্রিশের কথা বলা হয়েছে তার ছায়া অনেকটাই আমরা দেখতে পাই বর্তমানের ইলন মাস্কের সাথে, বাকিটা পাঠকই বলতে পারবেন। ধর্ম আর বিজ্ঞানের এই যুদ্ধ চলবেই। রবার্ট ল্যাংডন সিরিজের বাকি বইগুলোতেও আমরা সেটাই দেখেছি। তবে এটা বলে দেয়া যায় সিরিজের প্রথম বই দ্যা ভিঞ্ছি কোড যেভাবে আলোড়ন তুলতে পেরেছিল অরিজিন সেটা করতে ব্যার্থ হয়েছে।
কাহিনী সুখপাঠ্য, চমৎকার আইডিয়া, কিন্তু মাঝে মাঝেই আপনার মনে হতে পারে অসম্ভব রকমের লম্বা করে ড্যান ব্রাউন বর্ননা করেছেন সবকিছু। এই গল্পের উপর যদি মুভি হয় সেটা দেখতে আমার কোন আপত্তি নেই। এবং অবশ্যই মুভিটা পাঁচ ঘন্টার হতে হবে। অনেক কিছু দেখার, বোঝার এবং বলার আছে এই গল্প দিয়ে। বিজ্ঞান আর ধর্মের লড়াই নয়… বরঞ্চ একটা সহাবস্থান হতে পারে মানবজাতির জন্য মঙ্গলকর।