Don’t Look Up (2021) – মুভি রিভিউ


Don't Look Up (2021) - মুভি রিভিউ
Don't Look Up (2021) - মুভি রিভিউ 1

Movie title: Don't Look Up

Movie description: আমেরিকার দুই অখ্যাত বিজ্ঞানী হঠাত করে আবিষ্কার করলেন সোলার সিস্টেমে একটা অচেনা ধূমকেতুর আবির্ভাব। আবিষ্কারের আনন্দে উল্লসিত হলেও যখন এর গতিপথ গননা করে দেখলেন সেটা সরাসরি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে, তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেল। প্রেসিডেন্টের সাথে জরুরী ভাবে দেখা করে তারা সেটা জানালেন। কিন্তু অবাক করা বিষয়- আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিজের পলিটিক্যাল এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তাদের কথার গুরুত্বই দিল না।এরপর তারা মিডিয়ায় গিয়ে জনগনকে সাবধান করার চেষ্টা করতে গেলেন, আর এতেও ব্যাপক হাসির পাত্র হতে হয় তাদের। সবাই ব্যাস্ত যার যার এজেন্ডা নিয়ে, কেউ তাদের সিরিয়াস ভাবে নেয় না।

Date published: December 5, 2021

Country: ইউএসএ (USA)

Duration: ২ ঘন্টা ১৮ মিনিট

Author: এডাম ম্যাকে; ডেভিড সিরোটা

Director(s): এডাম ম্যাকে

Actor(s): লিওনার্দো ডি-ক্যাপ্রিও, জেনিফার লরেন্স, রব মরগ্যান, মেরিল স্ট্রিপ, জোনাহ হিল, কেট ব্লানচেট

Genre: কমেডি

  • কাহিনী
  • অভিনয়
  • সিনেমেটগ্রাফী
  • মিউজিক
4.4

পলিটিক্যাল স্যাটায়ার নয়, এটা আমাদের সমাজের বাস্তবতা

অনেক নামীদামী অভিনেতা অভিনেত্রী নিয়েও অনেক সময় ভাল ছবি করা যায় না। আবার পলিটিক্যাল স্যাটায়ারে মুভি বানানোও ঝক্কির বিষয়। এত এত বড় মাপের তারকা নিয়ে যখন একটা ছবি বানানো হয় তখন সবার আশার পারদও অনেক উপরে থাকে। সে হিসেবে অনলাইনে অনেক কঠিন সমালোচনা দেখতে পাবেন এই ছবির। কিন্তু কথা দিচ্ছি – দেখতে বসলে একটুও খারাপ লাগবে না। ডি-ক্যাপ্রিও আর জেনিফার লরেন্সের মুগ্ধ অভিনয়ে দুই ঘন্টা সময় উড়ে যাবে।

আমাদের সরকার আর সমাজের প্রতিচ্ছবিও এই ছবি। কিভাবে আমরা বুঁদ হয়ে আছে মিথ্যে সোশ্যাল মিডিয়া আর পপ কালচারে, আর আমাদের মিডিয়া কিভাবে মিথ্যে গেলাচ্ছে জনগনকে তার একটা স্যাটায়ার দেখতে পাবেন Don’t Look Up (2021) এই ছবিতে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে যখন বিজ্ঞানীরা বারংবার সতর্ক করে যাচ্ছেন পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোকে, তারা এটাকে অনেকটা মজার ছলে নিয়েছে, কেউ কেউ আবার একে আজগুবি (Hoax) বলেও উড়িয়ে দিচ্ছে, কিন্তু সত্যটা খুব ভয়ংকর আর আমদের পুরো প্রজাতির জন্য ধেয়ে আসছে অনিবার্য এক পরিণতি।

কমেডি বা সায়েন্স ফিকশন কোন ক্যাটাগরিতেই হুট করে এই মুভিকে ফেলা যাবে না। আর যারা পলিটিক্যাল স্যাটায়ার দেখে অভ্যস্ত নন তারা এটাকে নিছক একটা কমেডি মুভি বলেই ধরে নেবেন।

ডিরেক্টর এডাম ম্যাকে (Adam McKay) এর সেরা কাজ এটা নাও হতে পারে, তবে যে উদ্দেশ্যে তিনি এই ছবি বানিয়েছেন তা পুরোপুরি সফল।

মানুষ হিসেবে আমরা আসলে খুব বেশি উদাসীন আর লোভী। আমাদের সামনে যখন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বৈজ্ঞানিক প্রমান দেয়া হয়, তখন খুব সহজেই আমরা সেটাকে উপেক্ষা করে যাই। অথচ অনবরত আমাদের পলিটিক্যাল দল আর উন্নত বিশ্বের দেশগুলো বিভিন্ন রকম এজেন্ডা বাস্তবায়নে সারা বিশ্ব জুড়ে ব্যস্ত রয়েছে।

এই পলিটিক্যাল স্যাটায়ারের মূল পটভুমি যদিও আমেরিকার প্রেসিডেন্সি, তাদের গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে উদাসিনতা আর পপ কালচার নিয়ে করা, তবে খুব সহজেই একে আপনি আমাদের দেশের জনগন আর সরকারের সাথে মিলিয়ে নিতে পারবেন।

স্যাটায়ার হচ্ছে বাস্তব কোন কিছুকে ব্যঙ্গ করে উপস্থাপন করা, কিন্তু এই মুভিতে স্যাটায়ার আর বাস্তবতার মাঝে এত মিল যে মাঝে মাঝে আতঁকে উঠতে হয়। যেটা আদতে উপহাস হবার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে তাই ঘটছে!

আমাদের দেশের পটভুমিতে চিন্তা করলেই দেখা যায়, আমরা ২০২১ জুড়ে ব্যস্ত ছিলাম, পরিমনি, হিরো আলম আর নাসিরের বিয়ে নিয়ে। উদ্ভট বিষয় হল আমাদের মূলধারার মিডিয়াগুলো এই সকল অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের প্রচার সবচেয়ে বেশি করেছে।

কারন আমাদের কুশিক্ষিত জনগন এই ধরনের সংবাদ বেশি খায়। অথচ দেশে নানা অনিয়ম হয়ে চলেছে তার কোন সংবাদ মূল ধারার পত্রিকা বা টিভিতে আসে না।

Don’t Look up (2021) – মুভিতে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ধুমকেতুর আড়ালে আসলে গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যখন আমেরিকার দুজন অখ্যাত বিজ্ঞানী তাদের প্রেসিডেন্টকে এই পৃথিবী বিধ্বংসী ধূমকেতুর খবর দেয়, তারা বেশ অবহেলার সাথে সেটা গ্রহন করে। মানবজাতিকে বাঁচানোর জন্য যে সময় আর অর্থ ব্যায় করার কথা ছিল তা অবহেলায় আর ব্যাবসায়িক স্বার্থে তারা ব্যবহার করে। ফলাফল, মুভির শেষে দেখা যায় পৃথিবীতে ডায়নোসরের মত মানুষেরও বিলুপ্তি ঘটে।

মুভির এন্ড ক্রেডিটে যদিও দেখানো হয় – নভোযানে চড়ে মানুষ বসবাসের উপযোগী একটা গ্রহে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সহ আরো কিছু মানুষ পালিয়ে যেতে পেরেছে, কিন্তু তাদের ভাগ্য খুব একটা সুখকর কিছু ঘটবে সেটাও বোঝানো হয়নি।

লিওনার্দো ডি-ক্যাপ্রিও এই ছবিতে একজন নার্ভাস প্রফেসরের ভুমিকায় অভিনয় করেন। কিছু থেকে কিছু হলেই যার প্যানিক এটাক হয়। আর তার সাথে পিএইচডি স্টুডেন্ট হিসেবে থাকে জেনিফার লরেন্স। এদের দুই জনের পর্দার অভিনয় আপনার দুই ঘন্টা সময় বৃথা যেতে দেবে না। জোনাহ হিল আর মেরিলি স্ট্রিপ এর কমেডিক উপস্থাপন আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের সাক্ষাত প্রতিচ্ছবি।

অনেক সময় কোনটা উপহাস আর কোনটা যে আসল সেটাই বুঝতে বেগ পেতে হবে। কারন রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরন হরহামেশাই আমরা দেখে আসছি।

ছবিতে McKay মিডিয়ার দিকে আঙ্গুল তুলেছেন, তাদের মিথ্যা আর অতিরঞ্জিত সংবাদের কারনে। দেখিয়েছেন কি করে সাধারন জনগন সোশ্যাল মিডিয়া আর পপ-কালচারে ডুবে আছে, এ যেন উটপাখির বালিতে মাথা গুঁজে রাখার মত। আমদের সময় শেষ হয়ে আসছে, অথচ নিজেদের সেরা প্রজাতি বলে দাবি করা মানুষেরা বোকার মত ব্যস্ত আছে টাকা বানানোর ধান্ধায়।

মতামত দিনঃ