নীল, এই যে আমি! – সুমন্ত আসলাম


নীল, এই যে আমি! - সুমন্ত আসলাম
  • গল্প
  • প্রচ্ছদ
  • মুদ্রন
  • দাম
3.6

নীল, এই যে আমি! - সুমন্ত আসলাম এর বই রিভিউ

চেহারা কঠোর করে আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। মোটা ফ্রেমের চশমার ফাঁকে উজ্জ্বল দুটো চোখ, উসকো-খুসকো চুল, সাদা টি-শার্টটার বাঁ পাশে হলুদ ঝোলের দাগ। কপাল কুঁচকে ফেলি আমি, চেহারা আরো কঠোর হয়ে যায় আমার। মোটা ফ্রেম ছাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। এবার তাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আরো। তার চশমার বাঁ পাশে ডাঁটি নেই। অদ্ভুত কায়দায় আটকে আছে সেটা নাকের সঙ্গে। কানাটা বলে কি-আমি নাকি বিষন্ন করছি বিকেলটা। কিন্তু না শোনার ভঙ্গি আমার, ‘কিছু বললেন?’ ‘সম্ভবত ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার ইচ্ছে আপনার। আমার বাবা পৃথিবীর অনেক কিছু দেখিয়েছেন আমাকে। কিন্তু একটা জিনিস কখনো দেখাতে পারেননি।’ মুখ টিপে হাসল ছেলেটা, ‘জিনিসটা কি জানেন?’ বিরক্তিমাখা স্বর আমার, ‘কী?’ ‘একটা মেয়ের মৃত্যু।’ ‘কী!’ কিছুটা শব্দ করে উঠি আমি। ‘ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে কিংবা লাফিয়ে গাড়ির নিচে পড়ে একটা মেয়ে মারা যাচ্ছে-এই জিনিসটা দেখার খুব শখ আমার।’ কানা বাবা মুচকি হাসে, ‘শখটা অনেকদিনের।’ রাগে পিত্তিটা জ্বলে যাচ্ছে আমার-কানাটা বলে কি! ইচ্ছে করছে লাফ দিয়ে ওই ছাদে গিয়ে কানাটার চোখ থেকে চশমাটা খুলে ফেলি আগে। তারপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই ছাদ থেকে।

বইয়ের নামঃ নীল, এই যে আমি!
লেখকঃ সুমন্ত আসলাম
প্রকাশ কালঃ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রকাশকঃ জসিম উদ্দিন
প্রকাশনঃ কথাপ্রকাশ
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৮৮
মূল্যঃ ১৫০ টাকা

নীল, এই যে আমি! - সুমন্ত আসলাম 1

আমি প্রথম ভেবেছিলাম প্রেমের উপন্যাস, বইয়ের মাঝামাঝি যাবার পরেও বিন্দুমাত্র ধরতে পারিনি গল্প কোনদিকে যাচ্ছে। তবে যারা সুমন্ত আসলামের ভক্ত আর পাঠক আছেন তারা বেশ ভালো করেই জানেন সুমন্ত হুট করে কিছু লেখেন না। সুতো ধরে একসময় ঠিকই টান দেবেন, এলোমেলো সব গল্প গিয়ে এক জায়গায় মিলে যাবে, একটা অর্থ দাঁড়িয়ে যাবে গল্প শেষের আগের পৃষ্ঠায়।

তবুও “নীল, এই যে আমি!” এই বইটাকে একটা প্রেমের গল্প হিসেবে ধরে নিতে চাই। মানুষের সাথে মানুষের প্রেম। ধরে নিতে চাই মানুষ ভুল করে না, সে অভিজ্ঞতা নেয়, শেখে তার অতীত থেকে। হয়ত এই বইয়ের গল্পটা সেরকমই।

উপন্যাস নাম দিলেও কলেবর অত্যন্ত ছোট, মাত্র ৮৭ পৃষ্ঠাতেই শেষ। এ যেন সুমন্ত নিজের মনের কথা বলেই হুট করে গল্প শেষ করে দিয়েছেন। পাঠক হিসেবে একটা সাসপেন্স তৈরি হয়ে তা হুট করেই মিলিয়ে গেছে। এটা ছোট গল্পের কাজ, উপন্যাসের কাজ দীর্ঘায়িত করা, সুমন্ত হয়ত পাঠককে ক্লান্ত করতে চাননি!

“নীল, এই যে আমি!” – তে কোন নায়িকা নেই, নায়ক নেই, আছে শুধু কিছু অনুভুতির গল্প। এলোমেলো ভাবে শুরু হওয়া সে সকল অনুভুতি আমাদের প্রতিদিনকার অভিমানের গল্প, আশা ভঙ্গের গল্প।

নম্রতা প্রিয়দর্শিনী তার নিজের ভাষ্যে প্রাত্যহিক সবকিছু বলে যায়, এবং পাঠক হিসেবে আমি একবারও বুঝতে পারিনি আসলে সে একটা অব্যক্ত যন্ত্রনার কথা বলছে। গল্প কোন দিকে যাচ্ছে, কানা বাবা, তার বাবার সাথে কথোপোকথন, মাসুক ভাই এর সাথে ঘোরাফেরা এসব কি অর্থ বহন করে -কিছুই বুঝিনি।

কিন্তু শেষে গিয়ে যখন নম্রতা নাটকীয়ভাবে তার বৃদ্ধ নানুর সাথে তার গল্প বলতে থাকে তখন কিছুটা সাইকোলজিকাল ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নম্রতার।

তবে হুট করেই গল্প শেষ হয়ে যাওয়াতে হতাশ হয়েছি। জীবনের হিসাব যদি এত সহজ হত তবে বেশ ভালো হোত। সুমন্ত আপনার কলম চলবে আরো অনেক কাল। দয়া করে এরকম হতাশ করবেন না। আপনি যে গভীর জীবনবোধের কথা বলতে চেয়েছেন তা বুঝতে পেরেছি কিন্তু অনুভব করতে পারিনি।

মতামত দিনঃ