অকটেন নাকি পেট্রোল – কোনটি আপনার বাইকের জন্য ভালো?


আজকে আমরা আলোচনা করবো মোটরবাইকের জ্বালানি নিয়ে। অকটেন নাকি পেট্রল-মোটরসাইকেলের জন্য কোনটি বেশি ভালো?

সাধারণত আমরা দুটি জ্বালানিই ব্যবহার করে থাকি আর সেজন্যই আশা করছি আপনারা আমার সঙ্গে একমত হবেন যে আজকের আলোচনাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর সঙ্গে আমাদের পকেটের স্বাস্থ্য(!) ও বাইকের পারফরম্যান্স সমানভাবে জড়িত।

আমাদের দেশের প্রায় সব মোটরসাইকেলই পেট্রল বা অকটেন চালিত। যদিও আর্মির কিছু ডিজেল চালিত বাইক আছে, তবে সেগুলো বর্তমানে অচল হয়ে পড়ে আছে। তাই আজকের আলোচনা হবে পেট্রল (মূলত গ্যাসোলিন) চালিত বাইক নিয়ে।

পেট্রল চালিত বাইক ২ ধরনেরঃ ২ স্ট্রোক ও ৪ স্ট্রোক।

আমাদের দেশে এ দুই ধরনের বাইকই রয়েছে। উভয় বাইকেই জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদনে প্রায় একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এখানে আমি কিছু টেকনিক্যাল বিষয় ব্যাখ্যা করবো, তবে আমার আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে জ্বালানি এবং আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কোন জ্বালানি ব্যবহার করে আমরা বেশি উপকৃত হবো এই বিষয়টি।

আজকের এই দীর্ঘ আলোচনায় আপনি যে বিষয়গুলো জানতে পারবেন-

  • অকটেন নাকি পেট্রল কোনটি বেশি ভালো জ্বালানি?
  • অকটেন ও পেট্রল কীভাবে কাজ করে?
  • সিসাযুক্ত গ্যাসোলিন ও সিসামুক্ত গ্যাসোলিন কী এবং কেন?
  • RON (রিসার্চ অকটেন নাম্বার) কী? এটা কী কাজে আসে?
  • বাংলাদেশে অকটেন ও পেট্রল জ্বালানির চালচিত্র
  • অকটেন নাকি পেট্রল-কোনটি ব্যবহার করবো?
  • বাংলাদেশের অকটেনের প্রকারভেদ
  • অকটেনের সঙ্গে পেট্রল মিশিয়ে ব্যবহার
  • অকটেন ব্যবহারে কি বাইকের ইঞ্জিন অধিক গরম হয়?
  • অকটেন ও পেট্রলের RON: নতুন বাইকে কি নিম্ন আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহার করা উচিৎ?
  • নিম্ন আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহার বাদ দিয়ে উচ্চ আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহার করা কি ঠিক হবে?
  • জ্বালানিতে ফুয়েল বুস্টার বা ডিটারজেন্ট অ্যাডিটিভ ব্যবহার কি ঠিক হবে?
  • নিম্ন ক্ষমতার ইঞ্জিনে উচ্চ আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহার করলে কী সমস্যা হবে?
  • ভেজাল জ্বালানি বা উচ্চ ক্ষমতার ইঞ্জিনে নিম্ন আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া কী?
  • মেটারসাইকেলে ভেজাল জ্বালানির প্রভাব কী?
  • গ্যাসোলিনের কার্যকারিতা পরীক্ষার উপায় কী?

অকটেন নাকি পেট্রল কোনটি বেশি ভালো জ্বালানি?

এটা বুঝতে হলে প্রথমেই আমাদেরকে জানতে হবে আমরা কোন ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করছি এবং এর মান কেমন। তবে সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশে এ ব্যাপারে তথ্য এতোটাই অপ্রতুল যে অধিকাংশ মানুষ প্রকৃত তথ্য জানতেই পারেন না। যাহোক, সাধারণত আমরা বাইকে পেট্রল ও অকটেন ব্যবহার করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অকটেন ও পেট্রল নাম দিয়ে আসলে কোনো পার্থক্য বোঝা যায় না। আন্তর্জাতিকভাবে এই দুইটিকেই ‘গ্যাসেলিন’ নামে ডাকা হয় এবং এদের রাসায়নিক হঠনও একই (C8H18)। তার মানে হলো, আমরা একে গ্যাসোলিন, পেট্রল বা অকটেন যেকোনো নামেই ডাকতে পারি। আসলে আন্তর্জাতিকভাবে অকটেন/পেট্রল/গ্যাসোলিন যাই বলি না কেনো, এগুলোকে আলাদা করা হয় রেটিং নাম্বার দ্বারা, যেটাকে অকটেন নাম্বার বা RON (Research Octane Number) বলা হয়।

সে হিসাবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গ্যাসোলিন শুরু হয় অকটেন নাম্বার ৮৬ (RON ৮৬) থেকে এবং সেটা সর্বোচ্চ ৯১, এমনকি ১০২-ও হতে পারে। তবে বিভিন্ন অকটেন নাম্বারের গ্যাসোলিন কিন্তু রাসায়নিকভাবে একই বস্তু। পার্থক্য আসলে এদের সঙ্গে যুক্ত কিছু এডিটিভস (যেমনঃ ডিটারজেন্ট ও রাসায়নিক পদার্থ) যেগুলো এই জ্বালানির দহন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় (জ্বালানির সংকোচন, প্রসারণ ও কমবাশনের মাত্রা বাড়ায়)। যার ফলে বেশি অকটেন নাম্বারের জ্বালানি ব্যবহারে সিলিন্ডারে স্মুথ কমবাশন হয় (পিস্টন, ভাল্ব বা কানেক্টিং রড থেকে কোনো নকিং হবে না)। এই আলোচনায় আমি পেট্রল ও অকটেন উভয়ের জন্যই গ্যাসোলিন শব্দটি ব্যবহার করবো।

অকটেন ও পেট্রল কীভাবে কাজ করে?

মানসম্পন্ন জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানার আগে আমাদেরকে জ্বালানি কীভাবে কাজ করে সেটা সম্পর্কে বেসিক কিছু বিষয় জেনে নিতে হবে। বাতাসের সঙ্গে গ্যাসোলিনের মিশ্রণটি সিলিন্ডার বা কমবাশন চেম্বারে পাঠানো হয়। সেখানে পিস্টন ওই মিশ্রণকে সংকুচিত করে এবং স্পার্ক প্লাগ তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে মিশ্রণটি বিস্ফোরিত হয় এবং এর ফলে সৃষ্ট গ্যাসের প্রচণ্ড চাপ পিস্টনটিকে সিলিন্ডারের বাইরে ঠেলে দেয়। এই কাজের জন্যই জ্বালানির অধিকহারে সংকোচন ও প্রসারণ ক্ষমতা থাকা দরকার, তবে তা নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় থাকতে হবে যাতে করে কমবাশন স্মুথ ও নিয়ন্ত্রিত হয়। তা না হলে কম্বাশনটি নিয়ন্ত্রণে থাকবে না এবং উৎপন্ন শক্তি ও ইঞ্জিনের প্রতিটি সাইকেলের মধ্যে সমান অনুপাতে থাকবে না। এর ফলে পিস্টন, কানেক্টিং রড ও ভাল্ব-এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হবে এবং পিস্টন থেকে হেঁচকি উঠবে আর ভাল্ব ও কানেক্টিং রড থেকে শব্দ শোনা যাবে (এই আওয়াজকে ইঞ্জিন নকিং বলা হয়)।তাছাড়া ইঞ্জিনে রিগ্রেশন বা ব্যাক ফোর্স টেনডেন্সি দেখা দিবে ও প্রচুর ভাইব্রেশন হবে।
সিসাযুক্ত গ্যাসোলিন

শুরুর দিকের গ্যাসোলিন ইঞ্জিনগুলো খুব বেশি কর্মদক্ষ ছিলো না। ফলে সেগুলো সাধারণ গ্যাসোলিনেই চলতো। কিন্তু দিন দিন গ্যাসোলিন ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ইঞ্জিন ভাইব্রেশনমুক্ত করা ও দ্রুত গতি নিশ্চিত করার জন্য স্মুথ ও নিয়ন্ত্রিত কমবাশন প্রয়োজন পড়ে। সেজন্য গ্যাসোলিনের মান নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় বাড়ানোর দরকার পড়ে। তাই এটা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে এবং এক পর্যায়ে গবেষকরা দেখতে পান যে, গ্যাসোলিনের জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এতে বুস্টার হিসেবে সিসা ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। আর সিসা স্বল্পমূল্য ও উৎকৃষ্ট বুস্টার হওয়ায় ২০ শতকের শেষ পর্যন্ত গ্যাসোলিনের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সিসা বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। একে বলা হতো সিসাযুক্ত গ্যাসোলিন। সিসা হচ্ছে স্বল্প খরচে সবচেয়ে ভালো বুস্টার, যেটা গ্যাসোলিনের দক্ষতা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। আর গ্যাসোলিনের সঙ্গে সিসা মিশিয়ে সহজেই এর RON বাড়ানো যায়। তাই প্রথমদিকে জ্বালানির দক্ষতা বাড়াতে হরহামেশাই সিসা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সিসা পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায়, ২০ শতকের শেষ দিকে এসে গ্যাসোলিনে সিসার মিশ্রণ নিষিদ্ধ করা হয়।

সিসামুক্ত গ্যাসোলিন

সিসার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশ ও মানুষকে বাঁচাতে গ্যাসোলিনের বুস্টার হিসেবে সিসা পরিহার করে, তার বদলে অন্য কিছুকে বুস্টার হিসেবে ব্যবহারের চিন্তা ভাবনা শুরু হয়, যাতে সেই বুস্টার দিয়েও গ্যাসোলিন থেকে সিসার সমান দক্ষতা অর্জন করা যায়। তাই গবেষকরা আবারো গ্যাসোলিনে সিসার পরিবর্তে অন্য কিছু যোগ করার জন্য গবেষণা শুরু করেন এবং একে বলা হয় সিসামুক্ত গ্যাসোলিন। তবে এখনো অনেক রেসিং গাড়ি, বিমানের জ্বালানি ও অল্প কিছু দেশে গ্যাসোলিনের সঙ্গে সিসা মেশানো হয় [সিসা ছাড়াও নাইট্রাস অক্সাইড (NOS) ব্যবহার করে স্বল্প সময়ের জন্য ইঞ্জিনের ক্ষমতা বাড়ানো যায়]। সিসামুক্ত আধুনিক গ্যাসোলিনও কিন্তু আপনার বাইক বা গাড়ির সর্বোচ্চ ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারে।

RON (রিসার্চ অকটেন নাম্বার)

গ্যাসোলিনের ঘনত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে RON গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গ্যাসোলিন ইঞ্জিনের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এর কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত গ্যাসোলিনের সঙ্গে বিভিন্ন অ্যাডিটিভ ও বুস্টার ব্যবহার করা হয়, যাতে গ্যাসোলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। শুরুর দিকে সিসা সবচেয়ে কার্যকারী বুস্টার প্রমাণিত হওয়ায় ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হলেও পরবর্তী সময়ে সিসার বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া ধরা পড়লে গবেষকরা নতুন ধরনের বুস্টার এবং বিষাক্ত সিসার বিকল্প হিসেবে ইথানল, মিথানল, টলুন ও অন্যান্য অ্যাডিটিভ খুঁজে পান, যেগুলো দামে সস্তা ও সহজলভ্য। যদিও সিসার চেয়ে এগুলো কম কার্যকরি তবে এসব বুস্টারও গ্যাসোলিনের দক্ষতা বাড়াতে পারে এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার এগুলো পরিবেশের জন্য তেমন একটা ক্ষতিকরও নয়। তাই শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে ইথানল ও অন্য কয়েকটি অ্যাডিটিভকে গ্যাসোলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য মনোনীত করা হয়। এবং এর পাশাপাশি জ্বালানির দক্ষতা ও মিশ্রিত অ্যাডিটিভের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে গ্যাসোলিনের কার্যকারিতার মানদণ্ড ঠিক করা হয়। আর এই মানদণ্ডকে বলা হয় অকটেন নাম্বার বা RON (রিসার্চ অকটেন নাম্বার)।

বাংলাদেশে অকটেন ও পেট্রল জ্বালানির চালচিত্র

আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী জ্বালানি পাম্পে রাখা সকল জ্বালানি ডিসপেনসারে RON নাম্বার লাগিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক, যাতে মানুষ জানতে পারে তারা কোন মানের জ্বালানির জন্য গাঁটের পয়সা খরচ করছে। উন্নত দেশের জ্বালানি পাম্পে একাধিক মানের গ্যাসোলিন রাখা হয় যেগুলোতে হলুদ রঙের RON স্টিকার লাগানো থাকে এবং RON 87, RON 91 বা অকটেন ৮৭, অকটেন ৯১ প্রভৃতি উল্লেখ করা থাকে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে কোনো জ্বালানি পাম্পেই এ ধরনের কোনো স্টিকার দেখা যায় না। ফলে আমরা জানতেও পারি না আমরা কোন মানের বা কোন RON নাম্বারের গ্যাসোলিন কিনছি পাম্প থেকে। তবে RON নাম্বার জানতে না পারলেও সাধারণভাবে আমরা দুই ধরনের বা দুই RON নাম্বারের গ্যাসোলিন ব্যবহার করে থাকি। এগুলো আমাদের কাছে সাধারণভাবে অকটেন ও পেট্রল নামে পরিচিত। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, আমাদের গ্যাসোলিনের (অকটেন ও পেট্রল উভয়ই) RON নাম্বার কতো?

আগেই বলেছি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সর্বনিম্ন RON এর মান হচ্ছে RON ৮৬ এবং এটা সর্বোচ্চ RON ৯১ পর্যন্ত হতে পারে। সে হিসাবে অনুমান করি আমাদের পেট্রলের RON সর্বনিম্ন ৮৬ এবং অকটেন হয়তো ৮৭ বা তার বেশি হতে পারে। কিন্তু অনুসন্ধান করে দেখা গেছে আমাদের পেট্রলের RON মাত্র ৮০! এবং অকটেন এর RON ৯৫। তবে আশার কথা হচ্ছে সাম্প্রতি জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে পেট্রলের দাম বাড়ানোর আগে এর RON ৮০ থেকে বাড়িয়ে ৮৬ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।এমন পরিস্থিতিতে যেখানে আমাদের অধিকাংশ বাইকাররাই জানেন না তারা কোন মানের গ্যাসোলিন ব্যবহার করছেন, তারপরও তাদের মাঝে খুব কমন একটা প্রশ্ন হচ্ছে, ‘পেট্রল ও অকটেনের মধ্যে থেকে তারা কোনটি ব্যবহার করবেন ও কেনো?’ আর আমি এর সঙ্গে যুক্ত করবো, ‘কোন বাইকের জন্য কোনটি?’

অকটেন নাকি পেট্রল—কোনটি ব্যবহার করবো?

আপনার ব্যবহৃত পেট্রলেল RON যদি সর্বনিম্ন ৮৬-ও হয়, তাহলেও আপনার আর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জ্বালানি ব্যবহার করার দরকার নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশে পেট্রলের RON এখনো ৮০! এটা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মানের চেয়েও নিম্নস্তরের। যার মানে দাঁড়ায় এই পেট্রল বাইকে ব্যবহারের অযোগ্য! কিন্তু বাস্তবতাটা ঠিক এমন নয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ বাইকাররা কি উচ্চ মানের বাইক ব্যবহার করেন? উত্তরটা হলো- না! আমাদের অধিকাংশই সিঙ্গেল সিলিন্ডার, সিঙ্গেল পিস্টন, দুই ভাল্বযুক্ত এবং ৯:১ এর চেয়ে কম কম্প্রেশন রেশিও নির্ভর ১৫০ সিসি’র নিচে বাইক ব্যবহার করেন। এসব বাইকের অধিকাংশরই ইঞ্জিন পারফরম্যান্স বাড়ানো যায় না।

তাছাড়া এখনো দেশে প্রচুর পরিমাণ ২-স্ট্রোক বাইক রয়েছে। সেসব কারণে আমাদের এসব কম ক্ষমতা সম্পন্ন ৪-স্ট্রোক বাইকের জন্য RON ৮০ পেট্রল ঠিকই আছে। অন্যদিকে ২-স্ট্রোক বাইকের জন্য বেশি RON দরকারও পড়ে না (আমিতো বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনাবশত কেরোসিন দিয়েও আমার হোন্ডা এইচ১০০এস সিডিআই চালিয়েছি)।তবে হ্যা, আপনাকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে, আপনার ব্যবহৃত পেট্রলের RON ৮০ কি না বা এর সঙ্গে কেরোসিন বা অন্য কোনো ভেজাল মেশানো হয়েছে কি না। আসলে আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে এমনকি ঢাকাতেও পেট্রলের সঙ্গে কেরোসিন বা অন্য ভেজাল মেশনোটা খুবই সাধারণ হয়ে পড়েছে আজকাল। এর ফলে আমরা নিম্ন আরওএনের পেট্রলও খাঁটিটা পাচ্ছি না। আর এ ধরনের ভেজাল পেট্রলের ফলে ইঞ্জিন দ্রুত খারাপ হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে যে প্রশ্নটা উঠে তা হলো, পেট্রলের বিশুদ্ধতা নিরূপণের কোনো উপায় আছে কি? হ্যা, সেই পথ রয়েছে। সেটা পরে আলোচনা করছি।

বাংলাদেশের অকটেনের প্রকারভেদঃ

এবার অকটেন নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। আমাদের দেশে যে অকটেন পাওয়া যায় তার RON ৯৫ বা অকটেন ৯৫। তাহলে এসব অকটেন আমরা কোন ধরনের বাইকে ব্যবহার করবো? আশার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে বর্তমানে অল্প কিছু উচ্চমানের বাইক পাওয়া যাচ্ছে। অধিকাংশ ১৫০ সিসি বা তদূর্ধ্ব বাইকেরই উচ্চমানের ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিন রয়েছে। এসব ইঞ্জিনের কম্প্রেশন রেশিও এবং ভাল্ব সংখ্যা দুইটিই বেশি থাকে। এসব বাইকে মানসম্পন্ন গ্যাসোলিন (আন্তর্জাতিকভাবে সর্বনিম্ন RON ৮৭ হতে হবে) ব্যবহার করতে হয়, যেখানে আমাদের পেট্রলের RON মাত্র ৮৬! সেজন্য এসব বাইকে অবশ্যই অকটেন ব্যবহার করা দরকার। তাছাড়া আমাদের দেশে ঋতু পরিবর্তনও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শীতকালে দেশের অনেক অঞ্চলেই প্রচুর ঠাণ্ডা থাকে। ফলে তখন পেট্রল এসব ইঞ্জিনের জন্য যথাযথ কার্যকরিতা দিতে পারে না। শীতে স্টার্টও সহজে নিতে চায় না। এসব ক্ষেত্রে অল্প কম্প্রেশন রেশিও সম্পন্ন নিন্মমানের ইঞ্জিনের জন্যেও তখন অকটেন ব্যবহার করা যেতে পারে।


অকটেনের সঙ্গে পেট্রল মিশিয়ে ব্যবহার

আমাদের দেশের অনেক বাইকারদের মাঝেই অকটেনের সঙ্গে পেট্রল মিশিয়ে বাইক চালানোর অভ্যাস রয়েছে। তারা বিভিন্ন অনুপাতে যেমন ১:১, ১:২ ইত্যাদি অনুপাতে অকটেন-পেট্রল মিশিয়ে নেয়। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানেন না তারা কী করছেন এবং কেনো করছেন। তারা কয়েকটি ভুল ধারণার ভিত্তিতে এমনটি করে থাকেন এবং তারা এও জানেন না তাদের বাইকের জন্য পেট্রল (RON ৮০) বা অকটেন (RON ৯৫) বা অন্য কিছু দরকার কি না। সাধারণত দুইটি ভিন্ন আরওএনের গ্যাসোলিন মেশানো হয় গড় RON পাওয়ার জন্য; যেমন (RON ৮০ + RON ৯৫)/২ = RON ৮৭.৫। তবে হ্যা, এটা তখনই করা যেতে পারে, যখন উভয় RON নাম্বারের গ্যাসোলিনেই একই বুস্টার, ডিটারজেন্ট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যাডিটিভ ব্যবহার করা হয়।

কিন্তু আমাদের দেশে পেট্রল ও অকটেনের সঙ্গে কী কী অ্যাডিটিভ কী মাত্রায় ব্যবহার করা হয় বা আদৌ একই ধরনের অ্যাডিটিভ ব্যবহার করা হয় কি না, তা আমরা জানি না। সেজন্য যে কোনো অনুপাতে পেট্রল-অকটেন মিশ্রণ না করা শুধু ভালোই নয় বরং সবচেয়ে নিরাপদ। আমাদের পেট্রলের RON কি সর্বত্রই ৮০ কিংবা নির্ভেজাল? এব্যাপারে কোন গ্যারান্টি দেয়া যাচ্ছে না। তাহলে আমরা কী করব?

এমন পরিস্থিতিতে আমরা সাধারণ মানের বাইকের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে শুধু ১:১ অনুপাতে (৫০% : ৫০%) পেট্রল-অকটেন মিশ্রিত করতে দেখতে পারি। এসব ক্ষেত্রে প্রথমে আপনার বাইকে পেট্রল ব্যবহার করে বাইকের পারফরম্যান্স নিরীক্ষা করুন। এরপর যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে অকটেন ব্যবহার করুন। অকটেন ব্যবহারের পারফমেন্সের পার্থক্য নিরীক্ষা করুন। যদি এই পারফরম্যান্স পছন্দ না হয় তবেই ১:১ অনুপাতে পেট্রল-অকটেন মিশ্রিত করুন। এবার বাইকের পার্ফরমেন্সে কেমন পরিবর্তন আসে তা নিরীক্ষা করুন এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।

বিঃ দ্রঃ এই পদ্ধতিটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বাইকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সেগুলোর জন্য শুধু অকটেন (RON ৯৫) ব্যবহার করুন।


অকটেন ব্যবহারে কি বাইকের ইঞ্জিন অধিক গরম হয়?

হ্যা, ইঞ্জিনের মানের ওপর নির্ভর করে এমনটি হতে পারে। আপনার বাইকের ইঞ্জিনের জন্য উচ্চমানর RON দরকার কি না তা আপনার জানা থাকা দরকার। যদি আপনার বাইকের ইঞ্জিন ১৫০ সিসির কম হয় ও এর কম্প্রেশন রেশিও ৯:১ এর কম হয় তবে আপনার সাধারণ পেট্রল ব্যবহার করলেই চলবে। তবে পেট্রলটি বিশুদ্ধ হতে হবে কিন্তু! অন্যথা ৫০% : ৫০% হিসেবে পেট্রল-অকটেন মিশিয়ে নিতে পারেন এবং এটাও শুধু শীতকালের জন্য। উচ্চ মানের RON এর গ্যাসোলিন বিশেষ করে গ্রীষ্মে ইঞ্জিন অধিক গরম করে এবং দীর্ঘ ব্যবহারে ইঞ্জিন নষ্টও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আপনার বাইকটি যদি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন হয় তাহলেই শুধু অকটেন (RON ৯৫) ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের ইঞ্জিন অকটেন ব্যবহারে অত্যধিক গরম হবে না। ইঞ্জিন তখনই অত্যধিক গরম হয় যখন আপনি কম কম্প্রেশন রেশিও নির্ভর ইঞ্জিনে অধিক কম্প্রেশন ও উচ্চ আরওএনের জ্বালানি ব্যবহার করবেন। তাই কম সিসির ও নিম্ন কম্প্রেশন রেশিও নির্ভর ইঞ্জিনের জন্য নিম্ন আরওএনের গ্যাসোলিনই উপযুক্ত। এবং উচ্চ ক্ষমতার বাইকের জন্য বেশি RON গ্যাসোলিন।

অকটেন ও পেট্রলের RON: নতুন বাইকে কি নিম্ন আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহার করা উচিৎ?

এটাও একটি ভুল ধারণা। মানুষ মনে করে নতুন বাইকে পেট্রল (নিম্ন RON) এবং পুরনো বাইকে অকটেন ব্যবহার করা উচিৎ। কিন্তু আসলে নতুন বাইকের ‘ব্রেক ইন পিরিয়ড’ (প্রথম ২০০০ কিমি) চলাকালে উচ্চ আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহার করা উচিৎ। যেহেতু ব্রেক ইনের সময় বাইক একটা লিমিটেড স্পিডে এবং কম আরপিএম-এ থাকে এবং বেশিক্ষণ একটানা চালানোও হয় না, সেহেতু ইঞ্জিন অত্যধিক গরম হওয়ার সুযোগই পায় না। তাছাড়া এসময় অকটেন ব্যবহারের ফলে ইঞ্জিন পর্যাপ্ত গরম হয় এবং অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশগুলো যথাযথভাবে কর্মক্ষম হয়। তাই আপনার নতুন বাইকে ২০০০ কিমি পর্যন্ত নিশ্চিন্তে অকটেন ব্যবহার করতে পারেন তাসে যত সিসি বা যে মানের বাইকই হোক না কেন।

নিম্ন আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহার বাদ দিয়ে উচ্চ আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহার করা কি ঠিক হবে?

ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখতে পারেন- কেউই আপনাকে কোম্পানি নির্দেশিত আরওএনের চেয়ে উচ্চ মানের আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহারের পরামর্শ দিবে না। যদি কখনো আপনার মনে হয় উচ্চ আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহার করা দরকার, তবে কয়েকটি অতিরিক্ত সুবিধা পেতে আানি এমনটি করতে পারেন। আপনার বাইকের ইঞ্জিন পুরনো হয়ে গেলে এবং সিলিন্ডার ক্ষয় হওয়ার কারণে পুরনো পিস্টন পাল্টে বড়ো মাপের নতুন পিস্টন লাগানোর পর প্রয়োজন পড়লে আপনি উচ্চ আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহার করতে পারেন।

কিন্তু যদি সিলিন্ডারের গ্যাপ পূরণ করে আগের মাপের পিস্টনই লাগান তবে আর উচ্চ আরওএনের গ্যাসোলিন দরকার পড়বে না। নতুন লাগানো যন্ত্রের ব্রেক ইনের জন্যও অকটেন ব্যবহার করা উচিৎ। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে- পিস্টন, পিস্টন রিং ও সিলিন্ডার ক্ষয় হওয়ার ফলে ইঞ্জিনে অধিক শব্দ তৈরি হলে, উচ্চ আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহারে এই শব্দ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। তবে এতে বাইকের মাইলেজ কমে যাবে। তাই ভালো হবে, আপনার বাইকের পুরনো ও নষ্ট যন্ত্রাংশ বদলে ফেলে প্রথম কয়েকশ কিলো অকটেন এবং তারপর আগে যে আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহার করছিলেন সেটাই ব্যবহার করা। তবে শীতকালে স্টার্টের ঝামেলা থেকে বাঁচতে উচ্চ আরওএনের গ্যাসোলিন নিতে পারেন যেটা আগেই একবার বলা হয়েছে।

জ্বালানিতে ফুয়েল বুস্টার বা ডিটারজেন্ট অ্যাডিটিভ ব্যবহার কি ঠিক হবে?

বাইক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বাইকের ইঞ্জিনে অতিরিক্ত কোনো ফুয়েল বুস্টার ও অ্যাডিটিভ ব্যবহার উৎসাহিত করে না। তবে আমাদের অনেকেই বাইকে অতিরিক্ত বুস্টার ও অ্যাডিটিভ ব্যবহার করে থাকি। এসব বুস্টার বাইকের কার্বুরেটর/ইঞ্জেক্টর, ইঞ্জিন ও ক্যাটালাইটিক কনভার্টারের জন্য ক্ষতিকর। এসব জিনিস দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে পিস্টনের কোনায়, ভাল্ব, সিলিন্ডার বডিতে জমে যায় এবং স্পার্ক প্লাগ ও ক্যাটালাইটিক কনভার্টার নষ্ট করে ফেলে। সেজন্য এসব বুস্টার শুধু স্পোর্টস বাইকে স্বল্পকালীন কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা উচিৎ। আর সাধারণ বাইকে এসব বুস্টার পরিহার করে বরং ইঞ্জিনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার। সম্ভব হলে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বাইক কিনতে হবে কিংবা ভালো পারফরমেন্স পাওয়ার জন্য আপনার বাইকের ইঞ্জিন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানকে দিয়ে মডিফাই করিয়ে নিতে পারেন। যদিও গ্যাসোলিনের RON নাম্বার সরাসরি ইঞ্জিনের শক্তি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত নয়, তবে ইঞ্জিনের মান যেমনিই হোক না কেনো এর পারফরমেন্স আরওএনের ওপর কিছুটা হলেও নির্ভর করে। তাই না জেনে না বুঝে কোন ধরনের এডিটিভ ব্যবহার না করাই ভাল।

নিম্ন ক্ষমতার ইঞ্জিনে উচ্চ আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহার করলে কী সমস্যা হবে?

এমনটি করলে শুধু অর্থের ও জ্বালানির অপচয়ই করা হবে। উচ্চ আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহারে ঠাণ্ডার মধ্যেও ইঞ্জিন দ্রুত স্টার্ট নিবে ও থ্রটল রেসপন্স ভালো দিবে। কিন্তু এতে খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ এর ফলে বাইকের মাইলেজ কমে যাবে। ইঞ্জিন দ্রুত অত্যধিক গরমও হবে। বাইকে দ্রুত টপ স্পীড উঠলেও ইঞ্জিনের জীবনী শক্তি নষ্ট হবে। কখনো কখনো ইঞ্জিন মিসফায়ার করতে পারে এবং দ্রুতই পিস্টন, পিস্টন রিং, কানেক্টিং রড ও সিলিন্ডার ক্ষয় হয়ে যাবে।

ভেজাল জ্বালানি বা উচ্চ ক্ষমতার ইঞ্জিনে নিম্ন আরওএনের গ্যাসোলিন ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া কী?

ইঞ্জিন দ্রুত স্টার্ট নিবে না। এমনকি গরমের সময় চোক লিভার টেনেও সহজে স্টার্ট করা যাবে না। ইঞ্জিনে যথাযথ কম্বাশন হবে না এবং সাইলেন্সারে কালো ধোঁয়া বের হবে। ইঞ্জিনের আওয়াজ কর্কশ হয়ে যাবে এবং পিস্টন হেঁচকি তুলবে, ভাল্ব ও কানেক্টিং রড থেকে খট খট শব্দ বের হবে। মাইলেজ বাড়লেও ইঞ্জিন দ্রুত অত্যধিক গরম হয়ে যাবে। ইঞ্জিন ভাইব্রেট করবে ও থ্রটল দ্রুত রেসপন্স করবে না। সর্বোচ্চ গতিও ঠিক মতো উঠবে না। স্পার্ক প্লাগ তৈলাক্ত ও কার্বনাইজড হয়ে যাবে ও ইঞ্জিন মিসফায়ার করবে। এক কথায় সস্তার তিন অবস্থা হয়ে যাবে আপনার বাইকের। এতো দাম দিয়ে ভাল মানের বাইক কিনে সামান্য কয়টা টাকা জ্বালানি খরচ বাঁচাতে গিয়ে এই দুর্ভোগে পড়তে চান কিনা নিজেই ভেবে দেখুন!
মেটারসাইকেলে ভেজাল জ্বালানির প্রভাব কী?

আমাদের দেশে অধিকাংশ সময়েই খাঁটি জ্বালানি পাওয়া যায় না। আমাদেরকে ভেজাল জ্বালানি ব্যবহার করতে হয়। ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে ভেজালযুক্ত জ্বালানি তেমন একটা সমস্যা তৈরি করে না। কিন্তু মটোরবাইকের মতো গ্যাসোলিন ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে (যেহুতু এগুলো কম সিসির সূক্ষ্ম ইঞ্জিন) ভেজাল জ্বালানি খুবই খারাপ প্রভাব ফেলে। অনেক সময় আমাদের এক্ষেত্রে কিছু করারও থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে আরওিএন রেটিং তো চিন্তাও করা যায় না। আর এমন ভেজাল জ্বালানি ব্যবহারে যা হয় :


১ ইঞ্জিন দ্রুত চালু হবে না। গরমের সময়েও চোক টেনে একাধিকবার চেষ্টা করা লাগতে পারে।

  1. যথাযথ কম্বাশন না হওয়ায় ইঞ্জিন মিসফায়ার করতে পারে। এক্সস্টে কালো ধোঁয়া বের হতে পারে।
  2. থ্রটল রেসপন্স ধীর হয়ে পড়ে। অ্যাক্সিলারেট করার সময় ব্যাক ফোর্স তৈরি হতে পারে।
  3. ইঞ্জিন থেকে কর্কশ আওয়াজ বের হতে পারে। পিস্টনে হেঁচকি, পিস্টন রিং, ভাল্ব ও কানেক্টিং রড থেকে খটখট শব্দ হবে।
  4. ইঞ্জিন ভাইব্রেট করবে।
  5. উচ্চ গতিতে ইঞ্জন হঠাৎ বন্ধ হয়ে পড়তে পারে।
  6. সর্বোচ্চ গতি তোলা সম্ভব হবে না।
  7. ইঞ্জিনের মসৃণতা হারাবে।

বাইকের প্লাগ, পিস্টন ও ভাল্ব দেখে আপনি আরো নিশ্চিত হতে পারবেন যখন দেখবেন :

  1. স্পার্ক প্লাগ ঘন ঘন কার্বনাইজড হয়ে পড়ছে।
  2. স্পার্ক প্লাগ পুড়ে কালো হয়ে যাবে (খাঁটি জ্বালানি দিয়ে যথাযথ কম্বাশন হলে সেটা স্পার্ক প্লাগ অ্যাশ বা ব্রাউন কালারের হবে)।
  3. স্পার্ক প্লাগ তৈলাক্ত হয়ে যাবে। (জ্বালানি ভালো হলে তৈলাক্ত হবে না)
  4. স্পার্ক প্লাগ দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে।
  5. সিলিন্ডার হেড, পিস্টন হেড, ভাল্বও দ্রুত কার্বনাইজড হয়ে পড়বে।
  6. এক্সহস্টের আওয়াজ বদলে যাবে এবং ৪-স্ট্রোক বাইক হলেও কালো ধোঁয়া বের হবে।
  7. ৪-স্ট্রোক বাইকের ক্ষেত্রে এক্সহস্ট পাইপ দিয়ে তৈলাক্ত ধোঁয়া বের হবে। (২-স্ট্রোকে হামেশাই তৈলাক্ত ধোঁয়া হয়)-

এমন কিছু ঘটলে কার্বনাইজড যন্ত্রাংশগুলো পরিষ্কার করতে হবে ও ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করতে হবে। এবং অবশ্যই কার্বুরেটরের নিচের স্ক্রু খুলে ভেজাল জ্বালানি ফেলে দিতে হবে। প্রয়োজনে যে পাম্প থেকে ফুয়েল নেন সেটাও পরিবর্তন করে ফেলুন! ভেজাল জ্বালানির সাথে কোন আপোষ নয়।

গ্যাসোলিনের কার্যকারিতা পরীক্ষার উপায় কী?

পরীক্ষাগার ছাড়া গ্যাসোলিনের বিশুদ্ধতা নিরূপণের কোনো উপায় নেই। তবে উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখে এর ভেজালের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। তাছাড়া আপনি নিজেও গ্যাসোলিনের কার্যাকিরতা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। অল্প কিছু গ্যাসোলিন (পেট্রল বা অকটেন) সংগ্রহ করুন। হাতের তালুতে অল্প একটু গ্যাসোলিন নিয়ে তা দুই হাত ঘষা দিন।

জ্বালানি বাষ্পীভূত হয়ে গেলে ভালো করে হাতের তালুর দিকে নজর দিন। যদি তালু শুকনো থাকে তাহলে বুঝবেন গ্যাসোলিন খাঁটি। কিন্তু যদি তালু ভেজা বা তৈলাক্ত থাকে তবে বুঝতে হবে গ্যাসোলিনে ভেজাল ছিলো। হাত শুকলে গন্ধ শুকে বুঝতে পারবেন গ্যাসোলিনের সঙ্গে কেরোসিন, ডিজেল নাকি তারপিন মিশানো ছিলো!

আরেকটি উপায় হচ্ছে- একটি স্টিলের প্লেটে কয়েক ফোঁটা গ্যাসোলিন নিন। এবার ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে তাতে ছুড়ে দিন। গ্যাসোলিন পুড়ে গেলে ও প্লেটের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে প্লেটটি পরীক্ষা করে দেখুন। প্লেট তৈলাক্ত থাকলে শুকে বুঝতে পারবেন কী ভেজাল মেশোনো ছিলো গ্যাসোলিনে।

আশা করছি এই লেখাটি পড়ে আপনি এখন অকটেন বনাম পেট্রলের পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন। তো এখন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন কি- আপনার বাইকে পেট্রল নাকি অকটেন?


লেখাটি ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত

মতামত দিনঃ