The Hitchhiker's Guide to the Galaxy - মুভি রিভিউ
-
গল্প
-
অভিনয়
-
মিউজিক
-
সিনেমেটোগ্রাফী
ভিন্ন ধরনের সায়েন্স ফিকশনের খিচুড়ি, সাইফাই অথবা ফ্যান্টাসি !
ডগলাস এডামস (Douglas Adams) নভেলের একটা কমিক উপস্থাপন করা হয়েছে The Hitchhiker’s Guide to the Galaxy মুভিতে। যারা ডগলাস এডামসের Hitchhiker’s সিরিজের সাথে পরিচিত নয়, ছবি দেখতে এবং বুঝতে তাদের সমস্যা হবে।
ছবিতে দেখা যায় আর্থার ডেন্টকে পৃথিবী ধ্বংস হবার ঠিক আগের মূহুর্তে তার এলিয়েন বন্ধু পৃথিবী থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যায়। একটা স্পেসশিপে করে তারা গোপনে অনির্দিষ্টের পথে যাত্রা করে। আর্থার নিজের দুঃখে নিমজ্জিত থাকলেও খুব একটা পাত্তা পায়না তার আশেপাশের ঘটে যাওয়া এত এত রোমাঞ্চকর ঘটনার কারনে। শুরু হয় তাদের মহকাশের এডভেঞ্চার।
মুক্তির সময়ঃ এপ্রিল ২৮, ২০০৫ (যুক্তরাজ্য)
ডিরেক্টরঃ Garth Jennings
বক্তাঃ Stephen Fry
আর্থার ডেন্ট এর সকালটা শুরু হয় ভীষন বিরক্তি নিয়ে। পুড়ে যাওয়া টোষ্ট আর পড়ে যাওয়া কফি নিয়ে। শুরুতেই আমরা দেখতে পাই তার বাড়ি ভাংগার জন্য বুলডোজার নিয়ে নির্মান শ্রমিকেরা হাজির হয়েছে। কারনে তার বাড়ি যেখানে সেখান দিয়ে একটা বাই-পাস রাস্তা নির্মান করা হবে। আর্থার বুলডোজারের সামনে গিয়ে শুয়ে পড়ে বাড়ি বাঁচানোর জন্য। কিন্তু তার প্রতিবাদে কাজ হবে বলে মনে হচ্ছে না!
আর্থারকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় তার এলিয়েন বন্ধু ফোর্ড। তারা গোপনে উঠে পড়ে একটা Vogons এলিয়েন শিপে। ফোর্ডের কাছেই আর্থার জানতে পারে পুরো পৃথিবীটাকেই ধ্বংস করে ফেলা হবে স্পেস হাইওয়ে বানানোর জন্য। এর থেকে সারকাস্টিক আর কি হতে পারে? যেখানে আর্থার তার বাড়ি বাঁচানোর চেষ্টা করছে সেখানে পৃথিবীটাই আসলে হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
নিজের গ্রহ হারিয়ে আর্থার ব্যথাতুর মনে পাড়ি জমায় দুই-মাথা ওয়ালা গ্যালাক্সির প্রেসিডেন্ট এর স্পেস শিপে করে মহাবিশ্বের এমাথা থেকে ওমাথায়।
ছবিটা সায়েন্স ফিকশন কমেডি, কিন্তু এটা বুঝতে হলে ছবি দেখার আগে ডগলাস এডামস এর হিচহাইকার সিরিজ পড়ে আসতে হবে। অন্তত কিভাবে এই স্পেস কমেডির শুরু হয় সেটা জানা না থাকলে মুভির অনেক কৌতুক এবং পটভূমি বোঝাটা দুস্কর।
মুভি হিসেবে চিন্তা করলে মূল বইয়ের গল্প থেকে বেশ অনেকটা দূরে সরে গেছেন ডিরেক্টর। যারা মূল সিরিজের ভক্ত তাদের অনেকের কাছেই ভালো লাগা আর না লাগার একটা দোলাচাল কাজ করাটা তাই স্বাভাবিক। হিচহাইকার গাইড টু গ্যালাক্সি নিয়ে বিবিসির করা একটা টিভি সিরিজও আছে। সেটার সাথেও এটার তুলনা করেন অনেকে।
এই রকম অদ্ভুতুড়ে, ফ্যান্টাসি গল্প স্ক্রিনে তুলে নিয়ে আসাটা বেশ কষ্টকর হলেও আমার দৃষ্টিতে পরিচালক এবং অভিনেতারা বেশ সফল হয়েছেন। ছবির গল্পের একটা উদ্দেশ্য থাকে এখানে সেটা কি এটাই অনেকে ধরতে পারবেন না। সবকিছুই আসলে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যপার। একজনের কাছে যা আবেগের আর কষ্টের আরেকজনের কাছে তা নিছক তামাশা। পুরো সময় জুড়ে নানা তামাশা করে যায় বাকি চরিত্রগুলো, শুধু আর্থার সিরিয়াস থাকার চেষ্টা করে!
নিজের গ্রহ হারিয়েও আর্থার তাই ভেঙ্গে পড়ে না। বরঞ্ছ তার ঝুলিতে যুক্ত হয় জীবন দর্শনের অন্যরকম একটা ভাবনা। সেখানে গল্প শেষে অনেক কিছুই আর তার কাছে গুরুত্বপূর্ন মনে হয় না। আমাদের এই বেঁচে থাকা, এর সাথের মানুষগুলো আর মহাবিশ্ব কত বিশাল, তার তুলনায় আমরা কত নগন্য, বোকা আর পেছনে পড়ে থাকা জাতি – সব কিছুই উঠে এসেছে এই স্পেস কমেডিতে।
সৃষ্টি রহস্যের অনেক কিছু নিয়েই কৌতুক করা হয়েছে ছবিতে। তাই অনেক ক্রিশ্চিয়ান ভক্তই ছবিটাকে ভালো চোখে দেখননি। আর আমার এটাও মনে হয়েছে তারা আসলে ছবিটার পেছনের অর্থ বোঝার থেকে পর্দার অভিনয় আর দৃশ্যায়নকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। গুলিয়ে ফেলেছেন তাদের ধর্ম বিশ্বাসের সাথে।
আমার দৃষ্টিতে, সাই-ফাই কমেডি হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখা থাকবে The Hitchhiker’s Guide to the Galaxy মুভিটার।