Time Trap (2018) – অসাধারন সাইফাই মুভি


Time Trap (2018) - মুভি রিভিউ
  • কাহিনী
  • অভিনয়
  • চরিত্র
  • গ্রাফিক্স
8.7

Time Trap (2018) - এক অসাধারন সাইফাই মুভি

সত্যিকারভাবে যদি সায়েন্স ফিকশন মুভি লাভার হয়ে থাকেন তবে এই মুভি অবশ্যই মন দিয়ে দেখবেন। আমাদের পরিচিত ধুমধাড়াক্কা মারামারির সাই-ফাই মুভির থেকে হাজার গুন কম বাজেটে অসাধারন এক কাহিনীর উপস্থাপন।

সায়েন্স ফিকশনের লোভ আমার মজ্জাগত। যখনই কোন বিখ্যাত বা অখ্যাত সায়েন্স ফিকশন মুভির নাম শুনি, আমি একবার হলেও তা দেখি।

বেশিরভাগই বস্তা পচা হলেও মাঝে মধ্যে দু-একটা অসাধারন কাহিনী নজরে পড়ে যায়। বাজেট অল্প কিন্তু কাহিনী খুবই মনে ধরার মত এইরকম একটা মুভি হল Time Trap (2018).

এই মুভি দেখার জন্য আইনস্টাইন হওয়া লাগবে না, কিন্তু থিওরী অফ রিলেটভিটি নিয়ে কিঞ্চিত জ্ঞান থাকলে ছবির মজা ধরতে দেরি হবে না। ছবিতে বিজ্ঞানের সুক্ষ কিছু কাজ আছে যা বিজ্ঞান অন্যমনস্ক লোক ধরতে পারবে না।

সাইফাই ভালোবাসেন এমন লোকেদের জন্য এই মুভিটা পোলাও এর মত টেস্টি হবার কথা।

মুভির পুরো কাহিনী জুড়ে টাইম ডাইলেশন উপস্থিত। তাই নভিসদের জন্য Time Dilation নিয়ে একটু বলে নিই।

“দুজন অবজার্ভারের নিকট যখন সময় দু-রকম ভাবে অতিবাহিত হয়, হতে পারে তা গতির কারনে কিংবা মাধ্যাকর্ষণ এর প্রভাবে, সেটাই টাইম ডাইলেশন”

ইন্টারস্টেলার মুভিটা যারা দেখেছেন তাদের মনে পড়বে এই টাইম ডাইলেশনের কথা। মার্ক ওয়েলবার্গ (মিলার) যে গ্রহটাতে আটকে থাকে তাতে এক ঘন্টা থাকার মানে পৃথিবীর সময়ে ৭ বছরের মত পার হয়ে যায়।

সহজ ভাবে বোঝালে, হাই স্পিডে চলন্ত কোন ট্রেনে থাকা ব্যাক্তির ঘড়ি ধীরে চলবে, প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক ব্যাক্তির ঘড়ি থেকে।

যদিও বাস্তব জীবনে এর পরিমান এত কম যে আমরা বুঝতে পারি না তফাতটা।

যে স্যাটেলাইট গুলো পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে সেগুলোতে কিন্তু এই টাইম ডাইলেশনের এফেক্ট পড়ে। তাই এগুলোতে টাইম কারেকশন করার একটা প্রোগ্রাম সেট করা আছে।

মুভির গল্পে ফেরত আসি-

এক আর্কিওলজিস্ট ভদ্রলোক একজন হিপ্পিকে খুঁজতে গিয়ে একটা গুহায় ঢোকেন। তার ধারনা ছিল সেই হিপ্পি “Fountain of Youth” বা অমৃতের সন্ধানে গিয়ে নিঁখোজ হয়েছে। এই ভদ্রলোক আসলে তার পরিবারে প্রচলিত প্রাচিন এক মিথের সন্ধানে গুহায় ঢোকেন। কিন্তু তিনি তখনও জানতেন না এই গুহাটার বিশেষত্ব হল সময় এখানে অন্যরকম ভাবে যায়। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের থেকে অনেক ধীর গতিতে।

তিনি নিঁখোজ হলে তাকে খুঁজতে যায় তার দুই ছাত্র সহ আরো তিনজন। এই পাঁচজনও গিয়ে টাইম ডাইলেশনের মধ্যে পড়ে। প্রথম দিকে তারা বুঝতেই পারে না পৃথিবী উপরে সময় কেটে গেছে তখন হাজার হাজার বছর।

কাহিনী এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু না, এই গুহায় রয়েছে আরো চমক। গুহা থেকে বের হবার সব রাস্তা যখন বন্ধ তখনই চমক নিয়ে আসে এক ভবিষ্যত মানব। কাহিনীর মোড় ঘুরে যায় এখানে। কিছু আদিম গুহাবাসী আটেকে ছিল এই টাইম ডাইলেশন এর ক্ষপ্পরে। এরাও ফাউন্টেন অফ ইউথ ব্যবহার করত। তাদের সাথে শুরু হয় ঝামেলা।

এরপরে সেই ফাউন্টেন আবিষ্কার হয় এবং আরো দেখা যায় টাইম ডাইলেশনের বিভিন্ন স্তর আছে এই গুহার মধ্যে। কোথাও সময় অনেক ধীরে চলছে গুহার অন্য জায়গার তুলনায়।

এতক্ষনে নিশ্চই বুঝতে পারছেন আমাদের মুভির নায়ক নায়িকারা ফেরত যেতে পারলেও তাদের চেনা পৃথিবীতে আর ফিরতে পারবে না। ফিরবে ভবিষ্যতের পৃথিবীতে।

বাকিটা নিজেই দেখে নিন ছবিতে, কিভাবে তাদের শেষ রক্ষা হয়।

এই ছবি আমার অসম্ভব ভালো লাগার কারন কিন্তু এর স্পেশাল ইফেক্ট নয়, বরঞ্চ এর কাহিনী। অনেক মুভি দেখেছি যেখানে টাইম ট্রাভেল দেখানো হয়েছে; নায়ক ধুম ধাম মারামারি করে আবার নিজের সময়ে ফেরত আসে। কিংবা অতীতের গল্প পরিবর্তন করে দিয়ে আসে ইত্যাদি ইত্যাদি। যার বেশিরভাগই বিজ্ঞান সম্মত নয়। বিগ বাজেটে এই ধরনের একশন কিন্তু কম নেই, সেই এইচ জি ওয়েলস এর টাইম মেশিন থেকে সর্বশেষ ইন্টারস্টেলার।

কিন্তু একটা গুহার ভিতরে নব্বই মিনিট শুধুমাত্র অল্প কিছুক্ষনের স্পেশাল ইফেক্ট দিয়ে আটকে থাকার কাহিনী বোরিং হতে গিয়েও আবার চমকপ্রদ হয়ে যাওয়াটা খুব কম।

ছবির ক্যরেক্টার প্লে করতে গিয়ে মেয়ের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু এই মুভিতে সেক্সিনেসের কোন জায়গা নেই। এইটা একটা পিউর সাই-ফাই মুভি। চিন্তা করছি এই কাহিনী যদি বিগ বাজেটে নেয়া যেত তাহলে স্পিলবার্গের মত লোক কি বানিয়ে ফেলত।

ডিরেক্টরকে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখানো উচিত। মুভি শেষ হয়েও শেষ হোল না, মনের মধ্যে একটা আক্ষেপ রেখে গেল। চাইলেই আরেকটা সিক্যুয়াল বানানো যাবে।

সাইফাই লাভাররা অবশ্যই মন দিয়ে দেখবেন।

মতামত দিনঃ