পুরান ঢাকায় এসেছেন কিন্তু কাচ্চি বা বিরিয়ানি খেয়ে যাননি… তাহলে আপনি পুরান ঢাকার ৫০% মজাই হারিয়েছেন, অথবা আপনি বিরিয়ানি লাভার নন একদমই। ঢাকার এই অংশের অলিতে গলিতে ফাস্ট ফুড বলতে আমরা কাচ্চি অথবা বিরিয়ানিটাকেই বুঝে থাকি।
হাজির বিরিয়ানি, হানিফের বিরিয়ানি, নান্নার বিরিয়ানি সব কিছুই কেমন যেন একটা মোঘল মোঘল ভাব নিয়ে পুরান ঢাকাবাসীকে কাচ্চি/বিরিয়ানি খাইয়ে যাচ্ছে অনেকটা সময় ধরে।
এরা বাদেও নামকরা এবং, বেনামী অনেক বিরিয়ানির দোকান আপনি খুঁজে পাবেন পুরান ঢাকায় ঢুকলেই। তবে নামকরা বিরিয়ানি আর কাচ্চির স্বাদ আলাদা আলাদা ভাবে মনে রাখতে পারবেন আপনি। মানে হাজির বিরিয়ানি আর নান্না সাহেবের বিরিয়ানির স্বাদ সম্পূর্ন আলাদা। হানিফের বিরিয়ানি কিংবা সুলতানের কাচ্চি এদেরও নিজেদের সিগ্নেচার টেস্ট আছে।
কার বিরিয়ানি সেরা – সেটা এখনো কেউ বলতে পারেনা। তবে হাজির বিরিয়ানি অনেকদিন ধরে ব্যবসা করে বলেই হয়ত তার ব্রান্ডিং কিছুটা বেশি। স্বাদে এর থেকে ভালো বিরিয়ানি হচ্ছে হানিফের কিংবা চকবাজারের মসজিদ গলির ইমাম বিরিয়ানি।
হাজির বিরিয়ানি নিয়ে আমার মত বিরিয়ানি খোরদের একটাই সমস্যা – মাংস কম, কিন্তু দাম বেশি। তবে স্বাদে গন্ধে এখনও একে টেক্কা দেবার মত বিরিয়ানি মার্কেটে আসেনি। একটা সময় শুধু নাজিরাবাজারে তাদের শাখা থাকলেও এখন আরো বেশ কয়েক জায়গায় তারা শাখা খুলেছে। ইদানিং চকবাজারেও তাদের একটা দোকান দেখা যাচ্ছে।
তবে নানা অসমর্থিত সূত্রে খবর আছে যে তাদের নাম নকল করে হাতিরপুল এলাকা, গুলশান-১, বসুন্ধরা ইতায়াদি জায়গাতেও কেউ কেউ বিরিয়ানির দোকান দিয়েছেন। বিশেষ করে একই ঢঙ্গে করা “বিসমিল্লাহ হাজি” দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন।
যাক সে সব কথা, কিন্তু বিরিয়ানির স্বাদে কারা সেরা?
আমার ব্যক্তিগতভাবে এখনও হাজি আর হানিফ এই দুই বিরিয়ানিটাই ভালো লাগে। তাদের দাম প্রতিনিয়ত বেড়ে চললেও স্বাদে কেউ এদের ধারে কাছেও নাই। হানিফ বিরিয়ানির একটাই সমস্যা এদের বিরিয়ানিতে তেল থাকে অনেক বেশি।
হানিফের বিরিয়ানিতে একটা সুন্দর মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়। হয়ত গোলাপজলের গন্ধ, কিন্তু নাকের খুব কাছে না আনলে বোঝা যায় না। এই স্মেলটা আবার হাজি বিরিয়ানিতে পাবেন না। স্বাদের দিক থেকে এরা হাজি বিরিয়ানির সমতুল্য, স্বাদে গন্ধে আলাদা 🙂 ।
নান্নার বিরিয়ানির টেষ্ট সাধারন মানের। এদের সিগনেচার খাবার হচ্ছে মোরগ পোলাও। মুরগির রোষ্টে অতিরিক্ত তেল আর পেঁয়াজ ব্যবহার করে এরা। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনও নান্নার খাবার খাই না। অতিরিক্ত তেল আর কিছুটা অপরিচ্ছন্ন বলে।
কাচ্চি ভালোবাসেন? তাহলে টেষ্ট করে দেখতে পারেন সুলতানের কাচ্চি। নতুন ঢাকা স্টাইলে এরা বাহারি রকম জর্দা আর বোরহানি দিয়ে কাচ্চি সার্ভ করবে আপনাকে। কাচ্চির দামও মাশাল্লাহ অনেক। সাথে থাকবে একটু আঁচার, তবে স্বাদ জঘন্য।
কাচ্চির জন্য সেরা মনে হয় “কলকাতা কাচ্চি“। এরা সুলতান ডাইনের ঠিক উল্টোপাশে, আবুল হাসনাত রোডে। পরিমান, দাম এবং স্বাদে এদের সমতুল্য সেই এলাকায় কেউ নেই। একজনের খাবার দিয়ে দু’জন অনায়াসেই পেট ভরানো যায়।
আরেকটা অখ্যাত কাচ্চি এবং পোলাওয়ের দোকান আছে খাজিদেওয়ান ১ম লেন এ – “এবাদুল্লার কাচ্চি” – একবার খাবেন তো বারবার মনে পড়বে। এ বেচারা ব্যবসার থেকে ঘোরাঘুরিই বেশি করে (মানে ক্যাটারিং), তাই অনেক সময় তার দোকান বন্ধ থাকে।
অনেক নাম-ডাক শুনে খেতে গেলাম নবাবগঞ্জ বাজারের জয়তুন বিরিয়ানি হাউজে। রাত প্রায় ১১.৩০ বাজে দেখে একটা কাচ্চি নিয়েই বাসায় দৌড়। খাবারের স্বাদ ১০০ তে ৬০ দেয়া যাবে, কিন্তু অতিরিক্ত তেল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তেল কম দিলে বাকি আইটেমও চেখে দেখব কোন একদিন।
এখানে উল্লেখ না করা আরো অনেক জায়গার কাচ্চি এবং বিরিয়ানির স্বাদ নিয়েছি। মনে পড়লে আবার যোগ করে দেব। তো আপনাদের অভিজ্ঞতা কি? কমেন্ট সেকশনে জানান। কার কাচ্চি বা বিরিয়ানি আপনার কাছে সেরা মনে হয়েছে?