শব্দরা সূর্য-স্নানে গেছে,
তাই একা বসে আছি আধো আঁধার
আঁনাজের গন্ধমাখা চিলেকোঠাটায়,
নকশিকাঁথার বুননে জমছে নীরবতা।
ঝুল-বারান্দার আমের ডালে লুকোনো
দুটো চুপকথা উড়ে যাচ্ছে
মাঠ মাঠ হলুদ সরষে ফুলের ওপর দিয়ে
চেনা সন্ধ্যার পথে।
সে পথ ধরেই বাঁশি বাজাতে বাজাতে
এই জানালার পাশ দিয়ে হেঁটে ফিরবে কোনো বেখেয়ালী রাখাল।
তার বাঁশির সুরের সাথে তাল মিলিয়ে
পিছুপিছু ছুটবে সব সূর্যাস্তের রেখা।
আমি বুঝে নেব সূর্য-স্নান শেষে
শব্দরা ফিরে আসার সময় হয়েছে।
স্নানের ঘরে গরম জল,
রসুইয়ের টাটকা ঘ্রাণে
নকশিকাঁথার নীরব সূচ খসে পড়বে এখুনি
আর শব্দরা সব হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়বে।
তাদের মধ্যে যার শরীরে গাঁয়ের ঘ্রাণ লেগে আছে
সাথে সাথে প্রাণভরে আমি তা নিশ্বাসে মেখে নেব।
তাকে শুধোবো, প্রিয় গ্রামগুলি কি এখনও অমনই আছে?
বাড়ির সাথে বাঁশঝাড়?
গোয়ালে গরু?
উঠোনে শুকোতে দেওয়া ধান?
শালিকের তালবাহান?
জলে ঝাঁপিয়ে পড়া কোনো দুরন্ত?
মাছের কলতানে আঁশটে বাতাস?
হাটের জিলাপী?
পান মাখা ঠোঁটে ঘরণীর সুঘ্রাণ?
কৃষাণের হাসি?
জানি, বরাবরের মতোই তার চোখে থাকবে দুঃখ রাশি রাশি।
পুনরায় ব্যাথীত হৃদয়ে
নীরবতার সূচটা হাতে তুলে নিতে নিতে
আমাকে ভাবতে হবে
আর কত রূপকথা বুনব?
কবিঃ নিপা খান, বাংলাদেশের শেষ প্রান্তের বিখ্যাত এক জেলা ঠাকুরগাঁয়ে তার জন্ম। শৈশব থেকেই কবি নন, তবে জীবন তাকে উপহার দিয়েছে অনেক কবিতা। জীবনের প্রয়োজনে প্রিয় স্বদেশ আর শৈশবের টাঙ্গন থেকে দূরে আছেন এই কবি।
নিপা খান এ প্রজন্মের কবি। শব্দের বেড়াজালে বেঁধে নিয়েছেন প্রতিবাদ আর প্রতিশ্রুতির হাতিয়ার গুলোকে। “বুনো মেঘ” “অর্ধেক দেবদারু” তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।