মওকা মওকা মওকা মওকা… এবং আমার কিছু কথা

রাশেদুজ্জামান পবিত্র


একটা কাহিনী হুনাই ভাইজান-আফারা… আগে একটা গান শুনাই…

আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা
কারোর দানে পাওয়া নয়,
আমি দাম দিছি প্রাণ লক্ষ কোটি
জানা আছে জগৎময়,
আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা

(তথাকথিত সুচিল আর বিশেষ করে সিনিয়র আত্মীয়-স্বজন প্লিজ এই স্ট্যাটাস থেকে দূরে থাকুন কারণ এর উগ্র ভাষা আপনার গলাদকরনে বদহজম হতেই পারে। হজম হলে আপনাকে স্বাগতম।)

কাহিনীটা কোথায় শুনেছি বা পড়েছি মনে নেই। তাই কাহিনীটা একটু এডিট করে চরিত্রের নামকরণ নিজেই করলাম। কিরণ বালা, কানকাটা রমিজ আর খোঁড়া প্রসিধু বাবু, ড্রাইভার যমদ্যূত।

কিরণ বালা উঠতি যৌবনে ভরপুর কলেজ ছাত্রি। প্রতিদিন ছাতা মাথায় খুব শালীনভাবেই হেঁটে হেঁটে কলেজ যায় আবার বাড়ি ফিরে আসে। এলাকায় সবাই খুব মেয়েটাকে প্রশংসা করে কারণ এই এলাকায় ও একমাত্র মেয়ে যে পড়াশুনা করছে। কিন্তু শকুন যত উপরেই উড়ুক না কেন নজর সব সময় মাটিতেই থাকে, চাতক হতে পারেনা। যার নজর যেদিকে। কানকাটা রমিজের কিরণ বালাকে সামনে থেকে দেখলে নজর গলার একটু নিচে আর পিছন থেকে দেখলে নজর আরও একটু নিচের দিকে। একদিন নিজের কাম লালসা আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সবার সামনেই কিরণ বালাকে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় এক দোকানের ভিতর। প্রথম টানেই ওড়না সরিয়ে ছিঁড়ে ফেলে কামিজের এক পাশের হাতা। সবাই বাইরে অসহায়ের মতো বলাবলি করতে থাকে এই কানকাটা রমিজের অত্যাচার আর কত! আর কত!! কিন্তু এগিয়ে যাবার সাহস পায় না।

হঠাৎ করেই কালো কাঁচের সাউন্ডপ্রুফ বুলেটপ্রুফ দামি বিশাল গাড়ি এসে থামে দোকানের সামনে। কেতাদুরস্ত পরিপাটী পোশাক পড়ে বেরিয়ে আসে সুঠামদেহি প্রসিধু বাবু। দোকানের দরজা ভেঙ্গে রমিজকে মারতে মারতে বের করে নিয়ে আসে কিরণ বালাকে। চারদিকের জনগন চারদিক থেকে চিৎকার করে উঠে প্রসিধু বাবু! প্রসিধু বাবু!! প্রসিধু বাবু!!! কয়েকজন বলতে থাকে, নাহ লোকটারে আমরা সারাজীবন খারাপই ভাবতাম। ভাবতাম টাকা আর মেয়েমানুষ ছাড়া কিছুই বুঝেনা। আজ তিনি মেয়েটার বাপের কাজ করলেন গো… (কাহিনীটা এখানে শেষ হলে ভালোই হতো কিন্তু কাহিনীর পরেও কাহিনী আছে…………)

সবার সামনে দিয়ে কিরণ বালার সমগ্র গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার জন্য তার গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। গাড়িতে উঠেই ড্রাইভারকে বলে, আমার গাজীপুর গড়ের বাংলোর দিকে যা তারাতারি। কিরণ বালার ওড়না ততক্ষণে জোর করে সরিয়ে ফেলেছে প্রসিধু বাবু। অনেক দিনের খায়েশ কিরণ বালাকে নিজের করে পাওয়ার। আজ তার শ্রেষ্ঠ মওকা মওকা মওকা মওকা…

কিরণ বালা তার যেটুকু শক্তি বাকি ছিলো তা দিয়ে আপ্রাণ চিৎকার করতে থাকে কিন্তু সাউন্ডপ্রুফ সেই কালো কাঁচের বাইরে যেতে পারেনা তা। শুধু বাইরে আবছাভাবে বোঝা যাচ্ছে মানুষ হাত উঁচিয়ে প্রসিধু বাবুর প্রশংসায় বার বার চিৎকার করছে। এবার প্রসিধু বাবু জোর করেই কিরণ বালার কামিজের অন্য হাতাটাও ছিঁড়ে ফেলে।

ড্রাইভারের মাথা তখন ভনভন করে ঘুরছে। তার মেয়ের মতোই একটি মেয়ের এই সর্বনাশ কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। পাশেই কাঁচ পরিস্কার করার ঝাড়ু হাতে নিয়ে এলোপাথাড়ি মুখে আর মাথায় মারতে থাকে প্রসিধু বাবুর। অজ্ঞানপ্রায় প্রসিধু বাবু চিন্তা করতে থাকে এই ড্রাইভারই আজ যমদ্যূত হয়ে গেলো কেন!!! এক লাথি দিয়ে প্রসিধু বাবুকে গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে কিরণ বালাকে নিয়ে গাড়ি ছুটায় কিরণ বালার বাড়ির দিকে আর ড্রাইভার ভাবতে থাকে বাজারের মেয়েদের সাথে যা ইচ্ছা কর কিন্তু আমার মেয়ে, মা-বোনদের একটা সুতাও ধরতে দিবোনা তোরে প্রসিধু বাবু।

এই গল্পের শিক্ষাঃ কিরণ বালা আর কেউ নয়, আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ। কানকাটা রমিজ হইলো পাকিস্তান আর বলার অপেক্ষা রাখেনা প্রসিধু বাবু আমাদের প্রতিবেশী ভারত। ওরা বারবার ভুলে যায় এই দেশে ওদের যমদ্যূতের মতো বাঙালি থাকে যিনি বজ্রকন্ঠে পাকিস্তানিদের ঘোষণা দেই “ রক্তের দাগ শুকায় নাই… এই রক্তের উপর দিয়া শেখ মুজিব এসেম্বলিতে যাবে না…” আবার নয় মাস অবর্ণনীয় অত্যাচারের কারামুক্তির পর ভারতের মাটিতে নেমে প্রথমেই দাম্ভিকের মতো শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কে বলেন “আমার দেশ হতে আপনার দেশের সৈন্যরা কবে ভারতে ফেরত আসবে?” এই দাম্ভিকতা না থাকলে এতো দিনে আসলেই বাংলা আফগানের মতো হয়ে যেত।

ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অনেক সাহায্য করছে এর জন্য আমরা সারাজীবন কৃতজ্ঞ। তারমানে এই নয় যে, নতজানু হয়ে জি স্যার, আচ্ছা স্যার করবো। আরে ভারত তো যে পর্যন্ত রাশিয়ার গ্রীন সিগনাল না পাইছে সে পর্যন্ত ভালোভাবে আগাইতেও সাহস পাই নাই যে চীন আবার যদি আক্রমণ করে। পরে শীতকাল আসলে যখন ভারত-চীন সীমান্ত ঠাণ্ডায় বরফ হয়ে যায় আর পাকিরা বিমান হামলা করে তখন শুরু করে সরাসরি যুদ্ধ। আর এতো দিন বাংলার মানুষই যুদ্ধ করে ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়ে পাকিদের দিগবিদিক করে ফেলছে। কারো দয়ায় স্বাধীনতা পাই নাই। দাম দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি।

সাহায্য করছে এর জন্য অনেক কৃতজ্ঞ কিন্তু একটা সুতাও কাউরে হাত দিতে দিবোনা।


লেখকঃ রাশেদুজ্জামান পবিত্র। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন।

মতামত দিনঃ