মহানগর- ২ ওয়েব সিরিজ রিভিউ


মহানগর- ২ ওয়েব সিরিজ রিভিউ
মহানগর- ২ ওয়েব সিরিজ রিভিউ 1

Name: মহানগর- ২

Description: ওসি হারুন ফিরে এসেছে মহানগর ২ নিয়ে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ডিবির (সম্ভাব্য) গোপন কার্যালয়ে। একে একে বেরিয়ে পড়তে থাকে থলের বেড়ালেরা। ওসি হারুনকে জালে আটকে ফেলতে চায় তার পলিটিক্যাল প্রতিপক্ষ। শেষ পর্যন্ত কি হয়?

Author: হইচই

  • গল্প
  • অভিনয়
  • সিনেমেটোগ্রাফী
  • মিউজিক
4.5

মহানগর ২ নিয়ে এসেছে অন্য রকম একটা চমক, ভালোলাগাটা থাকছেই

মহানগর ১ যারা দেখেননি তারা কোনভাবেই অংক মেলাতে পারবেন না মহানগর ২ এর। তাই এত আলোচনা সমালোচনা শুরু করার আগে চট করে সিরিজ এর প্রথম পার্টটা দেখে আসেন।

ওসি হারুনের বিরুদ্ধে মলয়ের করা মারাত্বক অভিযোগে সে আটক হয়। জিজ্ঞসাবাদের জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গোপন একটা জায়গায়। হারুন বারবার জিজ্ঞেস করছিল এরা কারা বা জায়গাটা কোথায়, সেটা কিন্তু তাকে আটক করা লোকেরা বলে না।

আমরা ধরেই নিয়েছিলা্ম গাড়ি দুর্ঘটনার জন্য আফনান চৌধুরীকে জেলে পাঠানোর কারনে ওসি হারুন এই ঝামেলায় পড়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ঘটনা তার থেকেও গভীর। এর বাইরেও অনেক রাঘব বোয়াল জড়িত।

 

নামঃ মহানগর ২
প্রকাশকালঃ এপ্রিল ২০২৩
ভাষাঃ বাংলা
পরিচালকঃ আশফাক নিপুন
অভিনয়েঃ মোশাররফ করিম, ফজলুর রহমান বাবু, আফসানা মিমি, অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য, বৃন্দাবন দাস, দিব্য জোতি ও তানজিকা আমিন…
অনলাইন প্লাটফর্মঃ হইচই

আমাদের মুভির থেকে নাটক ভাল, আর নাটকের থেকেও ভালো আমাদের ওয়েব সিরিজ। আশফাক নিপুন আরেকবার তার জাদুকরী ছোঁয়া দেখালেন মহানগর ২ ওয়েব সিরিজে।

মহানগর ১ দেখেছি, ভালো লেগেছে। সেটা নিয়ে একটা রিভিউও দিয়েছিলাম। তাই দ্বিতীয় সিজন দেখার পর কিছু লেখার জন্য হাত নিশপিশ করছিল।

ওসি হারুনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ভাল গ্যাঁড়াকলে পড়ে সে, কোথায় এসেছে কারা এরা, কিছুই জানা নেই। তবে সে বুঝতে পারে এখান থেকে বের হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।

যখন আমরা সবাই ধরে নিয়েছি এটা আসলে গাড়ি দূর্ঘটনার সাথে জড়িত আফনান চৌধুরীর কাজ, ঠিক তখনি জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে পড়ে আরো ভেতরের খবর। আমরা জেনে যাই এর সাথে ওসি হারুনের পূর্বের কিছু কাজের যোগসুত্র রয়েছে।

এইখানেই ক্রাইম থ্রিলারের সার্থকতা। আপনি যখন ভাবছেন ঘটনা তাহলে এটা, ঠিক তখনি গল্পকার গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে আপনার ভাবনার রাস্তাকে এলোমেলো করে দেবে।

একদম শেষ পর্বের আগে পর্যন্ত তাই বোঝা কঠিন ছিল আমাদের গল্পের মূল চরিত্র ওসি হারুন কি আসলে ভালো না খারাপ চরিত্রের?

ওসি হারুনের চরিত্রে মোশাররফ করিম এবারেও উতরে গেছেন। একটা সময়তো মনে হয়েছে তিনি বাদে এপাড়-ওপাড় বাংলায় কেউই এই চরিত্রের মর্যাদা রাখতে পারত না। মোটামুটি নাদুস-নুদুস দেখতে, চেহারায় ধূর্ততার ছাপ, কখন কি করবে বোঝা যায় না, কিছুটা সারকাস্টিক আর চোখে অল্প হিংস্রতা- এরকমই আমাদের ওসি হারুন।

মহানগর এক আর দুই দেখুন, খুব বেশি আউটডোরে শুটিং হয়নি। এবং আপনি সেটা লক্ষ্যও করেননি, কারন গল্পের বুনন ভাল থাকলে সেটাতেই মনোযোগ বসে থাকে।

ফজলুর রহমান বাবুকে ধন্যবাদ দেয়াই যায়, এরকম দূর্বল চরিত্রকে যথাসাধ্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করার জন্য। বাবু উতরে গেছেন তার চাহনি আর নির্লিপ্ততায়। কিন্তু একজন অফিসার হিসেবে ইন্টারোগেশনে তার যে পাওয়ার দেখাবার কথা সেটা তিনি দেখাননি। এর ব্যখ্যাও তিনি দিয়েছেন সিরিজে।

কিছু জিনিস আপনার চোখে পড়বে সেটা হচ্ছে, সিরিজে দেখানো হয় ওসি হারুন একজন চেইন স্মোকার, কিন্তু তার ধূমপান করার যে স্টাইল সেটা ঠিক পটু নয়।

কম্পিউটারের স্ক্রীন অন রেখে আড়িপাতা যন্ত্র দেখানো কোন কাজের জিনিস নয়, এই সেটাপটায় কিছুটা ছেলেমি রয়ে গেছে। ইন্টারোগেশন সেল, বাথরুম আর সেটা ডিজাইনে আরো কিছূটা মনযোগী হলে একেবারে দশে দশ রেটিং দিয়ে দেয়া যেত।

আমাদের দেশে বাস্তব ঘটনার সাথে মিল রেখে নাটক বা সিনেমা বানানো হয়না। আর সেটা যদি হয় রাজনৈতিক কোন ঘটনা নিয়ে তবে কেউই আর সাহস করে আগায় না। মহানগর ২ তে আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান আর নিকট অতীতের কিছু ঘটনার ছায়া দেখতে পাবেন নিশ্চিত রুপে। ঘটনার পেছনের রাঘব বোয়ালদের না দেখলেও সেগুলোর সাথে জড়িয়ে থাকা কুশিলবদের ঠিকই দেখতে পাবেন। আর আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাজের একটা ছায়াও দেখতে পারবেন। যদিও যথেষ্ট রাখঢাক করেই সিরিজে ঘটনাগুলো দেখানো হয়েছে, তবুও অতি সাধারণ দর্শকও বুঝে যাবেন কোথাকার চরিত্র এরা।

সিরিজের শেষে খুব কাছের বন্ধুর বিস্বাসঘাতকতা চমকে দেবে আপনাকে। গুলি খেয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে থাকে সদ্য মুক্ত হওয়া ওসি হারুন… আমরা এখানেই দাঁড়ি টানি। এরপর যদি আরেকটা সিজন আসে, যেটা আসলেই আসা উচিত, তবে কি হতে পারে?

ওসি হারুন কি বেঁচে যাবে?

সিনেমার হিরোদের মত জিতে যাবে রাজনৈতিক নেতার ভুতের বিরুদ্ধে? নাকি বাস্তবের ট্র্যাজিক হিরো হয়েই থাকব?

মতামত দিনঃ