“তোমারে মানা করছিলাম না মেহমানদের সামনে না আইতে? তুমি তো আমার মান সম্মান নষ্ট করে দিলা” রাবেয়া বেগম এর হাত ধরে টেনে অন্য রুমে নিয়ে এ কথা বললো তুহিন।
আজ তুহিন এর জন্মদিন। এ উপলক্ষে বেলুন দিয়ে তুহিন এর রুম সাজিয়েছে তুহিনের স্ত্রী আলেয়া। আনা হয়েছে বিশাল একটি জন্মদিন এর কেক। তুহিনের বন্ধুরা এসেছে তার জন্মদিন উদযাপন করতে। শত আয়োজন দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেননি, তুহিন এর রুমে প্রবেশ করেছিলেন মলিন চেহারার চামড়া কুচকানো ষাটোর্ধ রাবেয়া বেগম!
রাবেয়া বেগম তুহিন এর মা। তুহিন এর বয়স যখন মাত্র দেড় বছর তখন স্বামীকে হারিয়েছেন। রাবেয়ার মা-বাবা তাকে অন্যত্র বিয়ে দিতে চাইলে ও তুহিন এর কথা ভেবেই রাজী হলেন না রাবেয়া। সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন। বহু কষ্টে তুহিন কে বড় করেছেন ,পড়াশোনা করিয়েছেন। তুহিন এর দিকে তাকাতে গিয়ে নিজের যত্ন আর নেওয়া হয় নি রাবেয়া বেগম এর।
“ওঠো বেলা অনেক হইছে,দোকানে যাইবা না?” আলেয়ার চেনা কন্ঠ শুনে জেগে উঠলো তুহিন। গোসল সেরে আলেয়ার দেওয়া খাবার গোগ্রাসে গিললো তুহিন। নাস্তা খেয়ে দোকানের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হবে এমন সময় রাবেয়া বেগম এর কন্ঠ শুনলো তুহিন “বাবা তুহিন ,একটু শুইনা যা বাবা” ; “কী কইবা দ্রুত কইয়া ফেলো, আমার সময় নাই”- বললো তুহিন।
বাবা কাল রাইত থেকে আমার পেট নামছে, দোকান থেকে আসার সময় আমার জন্য দুইটা পেট নামার বড়ি নিয়া আসিছ বাজান।
এত্তো ওষুধ-মষুধ লাগবো না, এগুলো এমনিতেই সাইরা যাইবো, শুধুই টাকা খরচের ধান্দা, বিড়বিড় করে বলতে বলতে ঘর থেকে দোকানের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেলো তুহিন।
দোকান খুলে আগর বাতি জ্বালিয়ে দোকান ঝাট দিলো। ক্রেতা না থাকায় স্মার্ট ফোন টা হাতে নিলো। ফেসবুক এর নিউজফিড টা মা দিবসের স্ট্যাটাস এ ভরপুর। সবাই তাদের মা কে কেমন ভালোবাসে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে পোস্টে। তুহিন ও একটি পোস্ট লিখলো” মা তোমাকে অনেক ভালোবাসি, আমার কাছে সবদিন ই মা দিবস”
লেখকঃ আনোয়ারুল ইসলাম সাদিক